—না, আমি কখনো আসামে ছিলাম না। যিনি বলেচেন, তিনি জানেন না।
আমার মনে ভীষণ সন্দেহ হোলো। জানকীবাবু এ-কথা বলতে চান কেন? তবে কি তিনি মিস্মিদের কবচ হারানোর এবং বিশেষ ক’রে সেখানে যদি আমার হাতে পড়ে বা পুলিসের কোনো সুযোগ্য ডিটেক্টিভের হাতে পড়ে তবে তার গুরুত্ব সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অবহিত?
আমি তখন আমার কর্ত্তব্য স্থির করে ফেলেচি। বল্লাম—মানে, অন্য কেউ বলে নি, আপনার দেওয়া একটা পাতার টোকা সেদিন আপনার শ্বশুরবাড়ীতে দেখে ভাবলাম এ-টোকা আসাম সদিয়া অঞ্চল ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না—মিস্মিদের দেশে অমন টোকার ব্যবহার আছে।
—আপনার ভুল ধারণা।
আমি তাঁর মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে পকেট থেকে মিস্মিদের কাঠের কবচখানা বের ক'রে তাঁর সামনে ধ’রে বল্লাম—দেখুন দিকি এ জিনিসটা কি?...চেনেন? যে-রাত্রে গাঙ্গুলিমশায় খুন হন, সে-রাত্রে তাঁর বাড়ীর পেছনে এটা কুড়িয়ে পাই। আসামে মিস্মিজাতের মধ্যে এই ধরণের কাঠের কবচ পাওয়া যায় কিনা—তাই।
আমার খবরের সঙ্গে সঙ্গে জানকীবাবুর মুখ সাদা ফ্যাকাশে হয়ে গেল—কিন্তু অত্যন্ত অল্পকালের জন্যে। পরমুহূর্ত্তেই ভীষণ ক্রোধে তাঁর নাক ফুলে উঠলো, চোখ বড়-বড় হোলো। হঠাৎ আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তিনি আমার ঘাড়ে লাফিয়ে পড়লেন বাঘের মত এবং সঙ্গে-সঙ্গে কবচ-সুদ্ধ হাতখানা চেপে ধ’রে জিনিসটা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। তাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি দু'হাতেই আমার গলা চেপে ধরলেন পাগলের মত।
আমি এর জন্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলাম।
বরং জানকীবাবুই আমার যুযুৎসুর আড়াই-পেঁচির ছুটের জন্যে তৈরি ছিলেন না।
তিনি হাতের মাপের অন্তত তিন হাত দূরে ছিটকে পড়ে হাঁপাতে লাগলেন।
আমি হেসে বল্লাম—এ লাইনে যখন নেমেচেন, তখন অন্তত দু'একটা প্যাঁচ জেনে রাখা আপনার নিতান্ত দরকার ছিল জানকীবাৰু! কবচ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবেন না। কবচ আপনাকে ছেড়ে দিয়েচে। এখন এটা আমার হাতে। এখন ভাগ্যদেবী আমায় দয়া করবেন।
—কি বলচেন আপনি?
—এ-কথার জবাব দেবেন অন্য জায়গায়। দাঁড়ান একটু এখানে।
থানার দারোগাবাবু কাছেই ছিলেন, আমার ইঙ্গিতে তিনি এসে হাসিমুখে বল্লেন—দয়া ক’রে একটু এগিয়ে আসুন জানকীবাবু! খুনের অপরাধে আপনাকে আমি গ্রেপ্তার করলাম...এই, লাগাও!
কনস্টেবলরা এগিয়ে গিয়ে জানকীবাবুর হাতে হাতকড়ি লাগালো।
জানকীবাৰু কি বলতে চাইলেন। দারোগাবাবু বল্লেন—আপনি এখন যা কিছু বলবেন, আপনার বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করা হবে, বুঝেসুঝে কথা বলবেন।