পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের পাহাড় ఫి একজন বড় স্বর্ণাম্বেষী পৰ্য্যটক যেতে যেতে হোচট খেয়ে পড়ে গেলেন । যে পাথরটাতে লেগে হোচট খেলেন—সেটা হাতে তুলে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখলেন, তার সঙ্গে সোনা মেশানো রয়েছে। সে জায়গায় বড় একটা সোনার খনি বেরিয়ে পডল। এ ধরনের কত গল্প সে পড়েছে দেশে থাকতে। এই সেই আফ্রিকা, সেই রহস্যময় মহাদেশ, সোনার দেশ, হীরের দেশ–কত অজানা জাতি, অজানা দৃষ্ঠাবলী, অজানা জীবজন্তু এর সীমাহীন ট্রপিক্যাল অরণ্যে আত্মগোপন করে আছে, কে তার হিসেব রেখেছে ? কত কি ভাবতে-ভাবতে শঙ্কর কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ কিসের শব্দে তার ঘুম ভাঙল। সে ধড়মড় করে জেগে উঠে বসল। চাদ আকাশে অনেকটা উঠেছে। ধবধবে সাদা জ্যোৎস্না দিনের মত পরিষ্কার। অগ্নিকুণ্ডের আগুন গিয়েছে নিবে। কুলীর সব কুণ্ডলী পাকিয়ে আগুনের ওপরে শুয়ে আছে। কোনোদিকে কোনো শব্দ নেই। হঠাৎ শঙ্করের দৃষ্টি পড়ল তার পাশে–এখানে তো তিরুমল আপ্না বসে তার সঙ্গে গল্প করছিল ! সে কোথায় ? তু হলে হয়তো সে তাবুর মধ্যে ঘুমুতে গিয়ে থাকবে। শঙ্করও নিজে উঠে শুতে যাবার উদ্যোগ করছে, এমন সময়ে অল্প দূরেই পশ্চিম কোণে মাঠের মধ্যে ভীষণ সিংহগর্জন শুনতে পাওয়া গেল। রাত্রির অস্পষ্ট জ্যোৎস্নালোকে যেন র্তাবু কেঁপে উঠল সে রবে। কুলীরা ধড়মড় করে জেগে উঠল। এঞ্জিনিয়ার সাহেব বন্দুক নিয়ে তাবুর বাইরে এলেন। শঙ্কর জীবনে এই প্রথম শুনলে সিংহের গর্জন—সেই দিকদিশাহীন তৃণভূমির মধ্যে শেষরাত্রের জ্যোৎস্নায় সে গর্জন যে কি এক অনির্দেশ অনুভূতি তার মনে জাগালে !—তা ভয় নয়, সে এক রহস্যময় ও জটিল মনোভাব । একজন বৃদ্ধ মাসাই কুলী ছিল তাবুতে। সে বললে, সিংহ লোক মেরেছে। লোক ন মারলে এমন গর্জন করবে না । র্তাবুর ভেতর থেকে তিরুমলের সঙ্গী এসে হঠাৎ জানালে তিরুমলের বিছানা শূন্য। সে তাবুর মধ্যে কোথাও নেই। কথাটা শুনে সবাই চমকে উঠল। শঙ্কর নিজে তাবুর মধ্যে ঢুকে দেখে এল সত্যিই সেখানে কেউ নেই। তখনি কুলীরা আলো জেলে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। সব তাবুগুলোতে খোজ করা হল, নাম ধরে চীৎকার করে ডাকাডাকি করলে সবাই মিলে—তিরুমলের কোনো সাড়া মিলল না। তিরুমল যেখানটাতে শুয়ে ছিল, সেখানটাতে ভাল করে দেখা গেল তখন একটা কোনো ভারী জিনিসকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দাগ মাটির ওপর মুস্পষ্ট। ব্যাপারটা বুঝতে কারো দেরি হল না। বাওবাব গাছের কাছে তিরুমলের জামার হাতার খানিকট টুকুরো পাওয়া গেল। এঞ্জিনিয়ার সাহেব বন্দুক নিয়ে আগে আগে চললেন, শঙ্কর তার সঙ্গে চলল। কুলীরা র্তাদের অনুসরণ করতে লাগল। সেই গভীর রাত্রে তাবু থেকে দূরে মাঠে চারিদিকে অনেক জায়গা খোজা হল, তিরুমলের দেহের কোনো সন্ধান মিলল না। এবার আবার সিংহগজ্জন