আমার রাগ নেই। আমি আপনাকে বন্ধুর মত পরামর্শ দিচ্চি—ও-কবচ আপনি কাছে রাখতে যাবেন না।
—কেন?—সে অনেক কথা। সংক্ষেপে বল্লাম—ও-জিনিসটা দূরে রেখে চলবেন।
আমি যেজন্যে আজ জানকীবাবুর কাছে এসেছিলাম, সে উদ্দেশ্য সফল হতে চলেচে। আমি এসেছিলাম আজ ওঁর মুখে কবচের ইতিহাস কিছু শুনবো ব’লে। আমার ওভাবে কথা পাড়বার মূলে ওই একটা উদ্দেশ্য ছিল। অনুনয়ের সুরে কোনো কথা ব’লে জানকীবাবুর কাছে কাজ আদায় করা যাবে না এ আমি আগেই বুঝেছিলাম। সুতরাং আমি তাচ্ছিল্যের সুরে বল্লাম—আমার কোনো কুসংস্কার নেই জানবেন।
জানকীবাবু খোঁচা খেয়ে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে বল্লেন—কুসংস্কার কাকে বলেন আপনি?
—আপনার মত ওইসব মন্ত্র-তন্ত্র-কবচে বিশ্বাস—ওর নাম যদি কুসংস্কার না হয়, তবে কুসংস্কার আর কাকে বলবো?
জানকীবাবু ক্রোধের সুরে বল্লেন—আপনি হয়তো ভালো ডিটেক্টিভ হতে পারেন, কিন্তু দুনিয়ার সব জিনিসই তা ব’লে আপনি জানবেন?
আমি পূর্ব্বের মত তাচ্ছিল্যের সুরেই বল্লাম—আমার শিক্ষাগুরু একজন আছেন, তাঁর বাড়ীতে ওরকম একখানা কবচ আছে।
—কে তিনি?
—মিঃ সোম, বিখ্যাত প্রাইভেট্-ডিটেক্টিভ।
যিনিই হোন, আমার তা জানবার দরকার নেই। একটা কথা আপনাকে বলি। যদি আপনি তাঁর মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী হন, তবে অবিলম্বে তাঁকে বলবেন সেখানা গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিতে। কতদিন থেকে তাঁর সঙ্গে সেখানা আছে, জানেন?
—তা জানিনে, তবে খুব অল্পদিনও নয়। দু’তিন বছর হবে।
—আর আমার সঙ্গে এ-কবচ আছে সাত বছর। কিন্তু থাক্গে।
ব’লেই জানকীবাবু চুপ করলেন। আর যেন তিনি মুখই খুলবেন না, এমন ভাব দেখালেন।
আমি বল্লাম—বলুন, কি বলতে চাইছিলেন?
—অন্য কিছু নয়, ও-কবচখানা আপনি আপনার গুরুকে টান মেরে ভাসিয়ে দিতে বলবেন—আর, এখানাও আপনি কাছে রাখবেন না।
—আমি তো বলেচি আমার কোনো কুসংস্কার নেই!
—অভিজ্ঞতা দ্বারা যা জেনেচি, তাকে কুসংস্কার ব’লে মানতে রাজী নই। বেশি তর্ক আপনার সঙ্গে করবো না। আপনি থাকুন কি উচ্ছন্ন যান, তাতে আমার কি?
—এই যে খানিক আগে বলছিলেন, আমার ওপর আপনার কোন রাগ নেই?
—ছিল না, কিন্তু আপনার নির্ব্বুদ্ধিতা আর দেমাক দেখে রাগ হয়ে পড়েছে।