জংলী-দেবতার কবচ, ও ধীরে-ধীরে আমায় নামিয়েচে এই সাত বছরে। এক-একটা জিনিসের এক-একটা শক্তি আছে। আমায় দিয়ে জাল করিয়েচে, পাওনাদারের টাকা মেরে দেবার ফন্দি দিয়েচে—শেষকালে মানুষের রক্তে হাত রাঙিয়ে দিলে পর্য্যন্ত। একজন সম্রান্ত ভদ্র ব্যবসাদার ছিলুম মশায়—আজ কোথায় এসে নেমেছি দেখুন! এ-প্রবৃত্তি জাগাবার মূলে ওই কবচখানা! আমি দেখেচি, যখনই ওখানা আমার কাছে থাকতো, তখনই নানারকম দুষ্টুবুদ্ধি জাগতো মনে—কাকে মারি, কাকে ফাঁকি দিই। লোভ জিনিসটা দুর্দ্দমনীয় হয়ে উঠতো। গাঙ্গুলিমশায়ের খুনের দিনের রাত্রে আমি দশটার গাড়ীতে অন্ধকারে ইস্টিশানে নামি। কেউ আমায় দেখে নি। আমার পকেটে ঐ কবচ—কিন্তু যাক্ সে-কথা, আর এখন বলবো না।
—বলুন না।—না। আমার ঘাড় থেকে এখন ভূত নেমে গিয়েচে, আর সে ছবি মনে করতে পারব না। এখন করলে ভয় হয়। নিজের কাজ করেই কবচ সরে পড়লো সে-রাত্রেই। আমার সর্ব্বনাশ ক’রে ওর প্রতিহিংসা পূর্ণ হোলো বোধহয়—কে বলবে বলুন! স্টীমারে আমায় একজন বারণ করেছিল কিন্তু। আসাম থেকে ফিরবার পথে ব্রহ্মপুত্রের ওপর স্টীমারে একজন বৃদ্ধ আসামী-ভদ্রলোককে ওখানা দেখাই। তিনি আমায় বল্লেন, ‘এ কোথায় পেলেন আপনি? এ মিরি আর মিস্মিদের কবচ, পশু এখানে মানুষের স্থান নিয়েচে, ওরা যখন অপরের গ্রাম আক্রমণ করতে যেতো—অপরকে খুন-জখম করতে যেতো—তখন দেবতার মন্ত্রপূত এই কবচ পরতো গলায়। এ আপনি কাছে রাখবেন না, আপনাকে এ অমঙ্গলের পথে নিয়ে যাবে।’ তখনও যদি তাঁর কথা শুনি তাহোলে কি আজ এমন হয়? তাই আপনাকে আমি বলচি, আমি তো গেলামই—ও কবচ আপনি আপনার কাছে কখনো রাখবেন না।
জানকীবাবু চুপ করলেন। যে উদেশ্য নিয়ে এসেছিলাম তা পূর্ণ হয়েচে। জানকীবাবুর মুখে কবচের ইতিহাসটা শুনবার জন্যেই আসা।
বল্লাম—আমি যা করেচি, কর্ত্তব্যের খাতিরে করেচি। আমার বিরুদ্ধে রাগ পুষে রাখবেন না মনে। আমায় ক্ষমা করবেন। নমস্কার!
বিদায় নিয়ে চলে এলাম ওঁর কাছ থেকে।
যতদূর জানি—এখন তিনি আন্দামানে।