তালনবমী २२S তাও-তো বটে। আজই তো তালনবমী ! ঘুমের মধ্যে ওসব কি হিজিবিজি স্বপ্ন সে দেখছিল ! 彎 বেলা আরও বাড়লো, ঘন মেঘাচ্ছন্ন বর্ষার দিনে যদিও বোঝা গেল না বেলা কতটা হয়েচে । গোপাল দরজার সামনে একটা কাঠের গুড়ির ওপর ঠায় বসে রইলো। বৃষ্টি নেই একটুও, মেঘ-জমকালো আকাশ। বাদলের সজল হাওয়ায় গা সিরসির করে । গোপাল আশায় আশায় বলে রইলো বটে, কিন্তু কই, পিলীমাদের বাড়ী থেকে কেউ তো নেমস্তন্ন করতে এলো না ! অনেক বেলায় তাদের পাড়ার জগবন্ধু চকোত্তি তার ছেলেমেয়ে নিয়ে সামনের পথ দিয়ে কোথায় যেন চলেছেন । * তাদের পেছনে রাখাল রায় ও তার ছেলে সাহু ; তার পেছনে কালীবর বাড়ুজ্যের বড় ছেলে পাচু আর ও-পাড়ার হরেন. গোপাল ভাবলে, এরা যায় কোথায় ? এ-দলটি চলে যাবার কিছু পরে বুড়ো নবীন ভট্চাজ ও তার ছোট ভাই দীক্স, সঙ্গে এক পাল ছেলেমেয়ে নিয়ে চলেছে । দীচু ভট্টচাজের ছেলে কুড়োরাম ওকে দেখে বললে, “এখানে বসে কেন রে । ষাবিনে ?” গোপাল বললে, “কোথায় যাচ্ছিল তোরা ?” “জটি পিসীমাদের বাড়ী তালনবমীর নেমস্তন্ন খেতে । করে নি তোদের ? ওরা বেছে বেছে বলেচে কিনা, সবাইকে তো বলেনি•••* গোপাল হঠাৎ রাগে, অভিমানে যেন দিশেহারা হয়ে গেল। রেগে দাড়িয়ে উঠে বললে, *কেন করবে না আমাদের নেমস্তন্ন ? আমরা এর পরে যাবোess* রাগ করবার মতো কি কথা সে বলেচে বুঝতে না পেরে কুড়োরাম অবাকু হয়ে বললে, “বারে । তা অত রাগ করিস কেন ? কি হয়েচে ?” ওরা চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে গোপালের চোখে জল এসে পড়লে—বোধ হয় সংসারের অবিচার দেখেই। পথ চেয়ে সে বসে আছে কদিন থেকে । কিন্তু তার কেবল পথ চাওয়াই সার হল ? তার সজল ঝাপস দৃষ্টির সামনে পাড়ার হারু, হিতেন, দেবেন, গুটকে তাদের বাপ-কাকাদের সঙ্গে একে একে তার বাড়ীর সামনে দিয়ে জটি পিলীমাদের বাড়ীর দিকে চলে গেল •••
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৩৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।