তালনবমী २९* দাসের লেনের স্বধীর সাহার কাছে সে মেডেল কোথা থেকে আসে ? “এদিকে এসো, এ মেডেল কোথায় পেয়েচ ?”
- ওটা আমার তার %
“তোমার তা বুঝলুম। পেলে কোথায় ?”
- আমার দাদু দিয়েচেন স্যার ।”
“তোমার দাদু কোথায় পেয়েছিলেন জানে ?”
- ই্যা, স্তার জানি । আমার দাদুর বাবার কাছে এক সাহেব জমা রেখে গিয়েছিল।”
“কি ভাবে ?” “আমাদের মদের দোকান ছিল কিনা, স্যার । মদ খেয়ে টাকা কম পড়লে ওটা বাধা রেখে গিয়েছিল, আর নিয়ে যায় নি—দাদুর মুখে শুনেচি ” হিসেব করে দেখলুম ছিয়াশি বছর উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েচে সেই বছরটি থেকে, যে বছরে সার্জেণ্ট পাকিনস্ ( সে যেই হোক ) এ মেডেল পায়। তখন তার বয়স যদি কুড়ি বছরও থেকে থাকে, এখন তার বয়স হওয়া উচিত একশো ছয় । স্বতরাং সে মরে ভূত হয়ে গেছে কোন কালে । সেদিন ছিল শনিবার, সকাল সকাল স্কুল ছুটি হবে এবং অনেক দিন পরে সেদিন দেশে যাবে পূর্বেই ঠিক করে রেখেছিলুম। আমার এক গ্রাম-সম্পর্কে জ্যাঠামশায় ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, বেশ পড়াশুনো আছে, গ্রামেই থাকেন। ভাবলুম, তাকে মেডেলটা দেখালে খুশি হবেন খুব । স্বধীরের কাছ থেকে মেডেলটি চেয়ে নিলুম, সোমবারে ফেরত দেব বললুম। স্কুলের ছুটির পরে বাসা থেকে স্কটকেস নিয়ে শিয়ালদা স্টেশনে এসে আড়াইটের গাড়ী ধরলুম। দেশের স্টেশনে যখন নামলুম, তখন বেলা সাড়ে পাঁচট। দু’মাইল রাস্ত হেঁটে বাড়ী পৌঁছুতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। সন্ধ্যার আগেই হয়তো পৌঁছুতে পারা যেত—কিন্তু আমি খুব জোরে হাটি নি। ভাদ্র মাসের শেষ, অথচ বৃষ্টি তত বেশী না-হওয়ায় পথ-ঘাট বেশ শুকনো খট্খটে। পথের ধারের বর্ষা-ভামল গাছপালা চোখে বড় ডালো লাগছিল অনেক দিন কলকাতা বাসের পরে— তাই জোরে পা ন-চালিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে আসছিলুম। এখানে প্রথমেই বলি, আমার বাড়ীতে কেউ থাকে না। পাশের বাড়ীর এক বৃদ্ধ, আমি গেলে রান্না করে দিয়ে আসতেন বরাবর। আমার এক বাল্যবন্ধু বৃন্দাবন, অনেক বছর ধরে বিদেশে থাকে, পিসিমার মুখে শুনলুম, আজ দিন পনরো হ’ল বৃন্দাবন বাড়ী এসেচে। শুনে বড় আনন্দ হ’ল, সন্ধ্যার পরেই ওর সঙ্গে দেখা করবো ঠিক করে, চা খেয়ে নদীর ধারে বেড়াতে বার হলুম –ষাবার সময় স্কুটকেসটা খুলে মেডেলটা পকেটে নিলুম, বৃন্দাবনকেও দেখাবো। নীর ধারে গিয়ে দেখি–বর্ষার দরুণ নদীর জল ভয়ানক বেড়েচে, নদীর জল কুল ছাপিয়ে দু’ধারের মাঠে পড়েচে । অনেকক্ষণ বসে রইলুম, সন্ধ্যার অন্ধকার নামলো একটু একটু, বাছুড়ের দল বাসায় ফিরচে। কেউ কোনো দিকে নেই –এক জায়গায় বর্ধার তোড়ে নদীর