তালনবমী ২৩১ দাড়িয়ে দেখচি, হঠাৎ আমার মনে হ’ল—ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়িনে কেন ? বেশ হবে!•••লাফ দেবো ? প্রায় দুৰ্দ্দমনীয় ইচ্ছা হ’ল লাফ দেবার। লাফ দেওয়াই ভালো।-•লাফ দিতেই হবে।•••দিই লাফ ?•••এমন সময় বৃন্দাবন ছাদের ওপর এসে বললে, *আয় ঘরের মধ্যে, মা চা পাঠিয়ে দিচ্চেন ; ওখানে দাড়িয়ে কেন ?” আরও প্রায় আধ-ঘণ্টা কথা বলবার পরে, নিচে থেকে চা ও খাবার এসে পৌঁছুলো ! আমরা দুই বন্ধুতে অনেক রাত পৰ্য্যস্ত গল্পগুজব করলুম। তার পর বৃন্দাবন খাওয়ার কতদূর যোগাড় হ’ল দেখতে নিচে চলে গেল । ঘরের মধ্যে বড় গরম—আমি বাইরের ছাদে খোলা হাওয়ায় আবার বেড়াতে লাগলুম। রাজমিস্ত্রিদের ভারার কাছে এসে দাড়িয়ে আমার মনে হ’ল—লাফ এবার দিতেই হবে। কেউ নেই ছাদে। কেউ বাধা দিতে আসবে না—এই উপযুক্ত অবসর । সঙ্গে সঙ্গে আমার মনের গভীর তলায় কে যেন বলচে—"লাফ দিও না, মুখ। লাফ দিও না, পড়ে চূর্ণ হয়ে যাবে।". আমার মাথার মধ্যে কেমন ঝিমঝিম করচে !••• কতক্ষণ পরে জানিনে, এবং কিসে থেকে কি হ’ল তাও জানিনে,—হঠাৎ বৃন্দাবনের চীৎকারে আমার চমক ভাঙলো ? দেখি, বৃন্দাবন আমাকে হাত ধরে টেনে তুলচে! “একি সৰ্ব্বনাশ ! তুই লাফ দিয়ে পড়লি দেখলুম যেন! ভাগ্যিস, বাশে পা-বেধে গিয়েচে তাই রক্ষে•••কি হ’ল তোর ?” আমার মাথা যেন কেমন ঘুরছিল, গা ঝিম্ঝিম করছিল। বৃন্দাবনকে বললুম, “আমি ভাই কিছুই জানিনে তো ?•••” বৃন্দাবন ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে আমায় শুইয়ে দিলে। সকলে বললে ট্রেনে আসার দরুন আর গরমে শরীর কি রকম খারাপ হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলুম। আমি জানি মাথা ঘুরে পড়ে আমি যাই নি, লাফ আমি ইচ্ছে করেই দিয়েছিলুম—তবে ঠিক ষে সময়টাতে আমি লাফ দিয়েচি সে সময়ের কথাটা আমি অনেক চেষ্টা করে কিছুতেই মনে করতে পারলুম না। বিছানায় গুয়ে বেশ স্বস্থ বোধ করলুম। পাশ ফিরতে शूळ९ যেন কি একটা শক্ত জিনিস বুকের কাছে ঠেকলো। পকেটে হাত দিয়ে দেখি—স্বধীরের সেই মেডেলটা। আশ্চৰ্য্য, এটার কথা এতক্ষণ একেবারে ভুলেই গিয়েছিলুম ! বৃন্দাবনকে সেটা দেখালুম। ওদের বাড়ীর সকলে মেডেলটা হাতে করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলে। রাত্তিরে নিজের ঘরে এসে গুয়ে পড়লুম। আমার বাড়ীতে কেউ নেই বর্তমানে, একাই থাকি এক ঘরে। একটা জিনিস লক্ষ্য করুচি ; যখন থেকে বৃন্দাবনের বাড়ী থেকে বার হয়ে পথে পা দিয়েছি, তখন থেকেই কেমন এক ধরনের ভয় করচে আমার । বাড়ীতে যখন ঢুকলুম, তখন ভয়টা যেন বাড়লো। এক ঘরে কতবার এর আগে ওয়েচি—এমন ভয় হয় নি মনে কোন দিন।--না, শরীরটা সত্যিই খারাপ। শরীর খারাপ থাকলে মনও দুৰ্ব্বল হওয়া খুবই স্বাভাবিক। জালো নিৰিয়ে শুয়ে পড়লুম। আমার শিয়রের কাছে একটা বড় জানলা—জানলা
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।