তালনবমী ২৩৩ এবার ঘুমুবার চেষ্টা করলুম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। কিন্তু আমার এ ভাব বেশীক্ষণ স্থায়ী হ’ল না। এ-ধারণ আমার মন থেকে কিছুতেই গেল না যে, আজ রাত্রে আমি এক নই—আরও কে এখানেই আছে! নিদ্রাহীন চোখে সে আমার ওপর খরদৃষ্টি দিয়ে পাহারা রেখেচে— অামায় সে নিরাপদে বিশ্রাম করতে দেবে না আজি ॥••• বার বার ঘুম আসে, আবার তন্দ্র। ছুটে যায়, অমনি জেগে উঠি ; কিন্তু চোখ চাইতে, বা বিছানার ওপর উঠে বসতে সাহস হয় না---আর সেই শব্দটা মাঝে মাঝে জানলার গরীদের ওপর হতে শুনি—খুব মৃদু করাঘাতের শব্দ যেন • যেন শব্দটা বলচে—“চেয়ে দেখ•••পেছন ফিরে জানলার দিকে চেয়ে দেখ•••* ঘামে দেখি বিছানা ভেসে গিয়েচে, ভদ্রের গুমট গরম কিনা ! এই অবস্থায় ভোর হ’ল। দিনের অালো ফুটলে, লোকজনের শব্দ কানে যেতে রাত্রের ভয়ট মন থেকে কোথায় গেল মিলিয়ে ! নিশ্চিন্ত মনে বেলা ন’টা পৰ্য্যস্ত পড়ে ঘুম দিলুম। তার পর উঠে, চা খেয়ে, পাড়ায় বেড়াতে বার হওয়া গেল । এই সময় একটা ঘটনা ঘটলে—তখন আমি তার বিশেষ কোন মূল্য দিই নি–কিন্তু পরে সব কথা মনে মনে আলোচনা করে দেখে সেটা ভারী আশ্চর্য্য বলেই মনে হয়েছিল। ও-পাড়ার পথে আমার সেই জ্যাঠামশাইয়ের সঙ্গে দেখা, তাকে দেখাবার জন্তে আমি মেডেলটা কাল রাত্রে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছিলুম—কিন্তু বৃন্দাবনদের বাড়ীতে নিমন্ত্রণের জন্তে র্তার সঙ্গে দেখা করতে পারি নি••• আমায় দেখে তিনি বললেন, “এই ষে স্বরেন, ভালো আছ ? কাল তুমি এসেচ দেখলুম, তখন অনেক রাত, তা আর ডাকলুম না। বোধ হয় বৃন্দাবনের বাড়ী থেকে ফিরছিলে ? আমি তখন ছাদে পায়চারি করচি, ষে গরম গিয়েচে বাবা কাল রাত্তিরে •••তোমার সঙ্গে লোক রয়েচে দেখে আরও ডাকলুম না। ও লোকটি কে ? খুব লম্বা বটে –যেন শিখ কি পাঞ্জাবীর মতো লম্বা—তোমার বন্ধু বুঝি ? বাঙালীর মধ্যে এমন চেহারা—বেশ, বেশ ।” আমি অবাক হয়ে জ্যাঠামশায়ের মুখের দিকে চেয়ে বললুম, “আমার সঙ্গে লম্বা লোক কাল রাত্তিরে । সে কি জ্যাঠামশায় ?” জ্যাঠামশায় আমার চেয়েও অবাক হয়ে বললেন, “তোমার সঙ্গে লোক ছিল না বলচো ? এক ঘাচ্ছিলে ? আমার চোখের দৃষ্টি একেবারে কি এতখারাপ হয়ে যাবে বাবা-••• আমি হেসে বললুম, “তাই হবে, জ্যাঠামশায়। চোখে কি রকম ঝাপসা দেখে থাকবেন। বয়েস হয়েচে তো ?•••আমার সঙ্গে কেউ ছিল না, তা ছাড়া আপনাদের বাড়ীর সামনের আমগাছটার ছায়া--"কি রকম আলো-আঁধার দেখেচেন চোখে•••অমন ভুল হয়।” জ্যাঠামশায় যেন রীতিমত হতভম্ভ হয়ে গেলেন । বললেন, “কি আশ্চৰ্য্য কাও ? এতটা ভুল হবে চোখে । আমগাছের এদিকে যখন তুমি টর্চ জাললে, তখন দেখলুম তুমি আর তোমার পেছনে একজন লম্বা মতো লোক--তার পর তুমি টর্চ নিবিয়ে আমগাছের ছায়ার মধ্যে ঢুকলে, তখনও জ্যোৎস্নার আলো আর আমগাছের ছায়ার অন্ধকারে আমি বেশ দেখতে বি. র. ৯—১৫
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৪৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।