পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী వరీ4 লোকের গলার শব্দ শুনে আমার সাহস ফিরে এলো। আমি ওদের ডাক দিলুম চীংকার করে। ওরা ছুটে এলো। আমায় ওখানে বনের মধ্যে দেখে তারা খুব আশ্চৰ্য্য হয়ে বললে, “ওখানে কি বাৰু ? কি হয়েচে ?” • তারপর লন্ঠন তুলে ওরা আমার মুখ দেখে বললে, “ও, আপনি ? কি হয়েছে আপনার ? মূখ একেবারে সাদা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েচে–ভয়টয় পেলেন নাকি ? বাউরিবাগান জায়গাট ভালো না। সন্ধ্যের পর এখানে অনেকে ভয় পায় ।” ওদের লণ্ঠনটা যখন উচু করে তুলে ধরলে আমার মুখে, সেই আলোয় দেখলুম—সামনের যুক্তিটা তখনও সেখানে ঠিক সেই রকম দাড়িয়ে। একজন বললে, “কি দেখছিলেন এখানে দাড়িয়ে বাবু—এই ষাডাগ্লাছটা ?” আর একজন বললে, “গাছটার ডালপালা কেটে মাথায় ঝোপের মতে করে রেখেচে, যেন মানুষ বলে অন্ধকারে ভুল হয় বটে•••চলে আস্কন বাবু!” আমিও দেখলুম ষাড়াগাছই বটে। মাথার দিকের পাতাগুলো ছেটে গাছটাকে দেখতে হয়েচে ঠিক হর্সগার্ডসদের ঘোড়ার বালামচির টুপি ! লোকের চোখের কি ভুলই হয় ? কাল আমি আবার জ্যাঠামশায়কে চশমা নিতে বলছিলুম ! ভেবে লজ্জা হ’ল মনে মনে । তিনি বৃদ্ধ লোক, তার চোখের ভুল তো হ’তেই পারে—আমারই যখন এই অবস্থা ! ওরা আমায় আলো ধরে স্টেশনে পৌঁছে দিলে। পরের দিন স্কুলে স্বধীরের মেডেলটা ফেরত দিলুম। স্বধীর বললে, “আপনাকে দাদু একবার ডেকেচেন, আমার সঙ্গে ছুটির পর আমাদের বাড়ী আক্ষন। নিয়ে যেতে বলেচেন ।” স্বধীরের দাছ বললেন, “ষাকৃ, আমার বড় ভয় হয়েছিল, মাস্টারবাবু! স্বধীরের কাছ থেকে মেডেলটা নিয়ে গিয়েছেন দেশে শুনলাম কিনা ? আপনার দেশের ঠিকানা জানতুম না—তা’হলে একটা তার করে দিতুম।”-ও মেডেলটা আমার বাবাকে একজন গোরা সৈন্ত দিয়ে যায়— আমি তখন জন্মাই নি। বাধা দিয়েছিল আর উদ্ধার করতে পারে নি। বেজায় মাতাল আর গোয়ার ছিল লোকটা। ও মেডেলের বিপদ হচ্ছে—আমাদের বংশের লোক ছাড়া অন্য কেউ নিলে তার বড় বিপদ ঘটে। আমার এক ভগ্নীপতি একবার কিছুতেই শুনলে না—অনেককাল আগের কথা-বাড়ী নিয়ে গেল মেডেল দেখাতে ; সেই দিনই সন্ধ্যের সময় ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল। মৃতদেহের পকেট থেকে মেডেলটা বেরুলো ।•••• আমি কলের পুতুলের মতো শুধু বললুম, “ছাদ থেকে “পকেটে মেডেল পাওয়া গেল ?•••• “হ্য, মাস্টারবাৰু। আমার নিজের ভগ্নীপতি, মিথ্যে কথা তো বলবো না। আজ সাতাশ-আটাশ বছর আগের কথা।... ওটা আরও দু-এক জন নিয়েচে–তক্ষুনি ফেরত দিয়ে গিয়েচে বলে রাতে ভয় পায়, গা ছমছম করে। কে যেন পেছনে ফলো করচে বলে মনে