২৩৬ বিভূতি-রচনাবলী হয়! ও বাইরের লোকের সহ হয় না। প্রাণ পৰ্য্যস্ত বিপন্ন হয়।--তাই ভাবছিলুম একট। তার করে দেবোe••* একটা কথা বলা দরকার । মাসখানেক পরে আমি আবার দেশে যাই । বাউরিবাগানে ঢুকে যেখানে সে-রাত্রে ভয় পেয়েছিলুম, সেদিকে চেয়ে দেখে সে ষাড়াগাছটা কোথাও আমার চোখে পড়লে না। যে আমগাছটার ধারে ঘাড়াগাছটা দেখেছিলুম, সেখানে দিনমানে বেশ ভালো করে দেখেছি—কোথাও সে ঘাড়াগাছ নেই—বা গাছ কেটে নিলে ষে গুড়িটি থাকবে, তারও কোন চিহ্ন নেই। কস্মিনকালে সেখানে একটা বড় ষাড়াগাছ ছিল বলে মনেও হয় না জায়গাটা দেখে ।••• মসলাভূত বড়বাজারের মসলাপোস্তায় দুপুরের বাজার সবে আরম্ভ হয়েচে । হাজারি বিশ্বাস প্রকাও ভূড়িটি নিয়ে দিব্যি আরামে তার মশলার দোকানে বসে আছে। বাজার একটু মন্দা। অনেক দোকানেই বেচা-কেন একেবারে নেই বললেই চলে, তবে বিদেশী খন্দেরের ভিড় একটু বেশি। হাজারির দোকানে লোকজন অপেক্ষাকৃত কম। ডান হাতে তালপাতার পাথার বাতাস টানতে টানতে হাজারি ঘুমের ঘোরে মাঝে মাঝে সামনের দিকে ঝুকে পড়ছিলো, এমন সময়ে হঠাৎ কার পরিচিত গলার স্বর শুনে সে চমকে উঠলো । —“বলি ও বিশ্বেস,—বিশ্বেস মশাই!—” বার দুই হাক ছেড়ে যতীন ভদ্র তার ডান হাতের লাঠিটা একটা কোণে রেখে দিয়ে সম্মুখের খালি টুলটার উপর ধপাস করে বসলো । যতীন হাজারি বিশ্বাসের সমবয়স্ক—অনেক দিনের বন্ধু। ভাগ্যলক্ষ্মী এতকাল তার ওপর অপ্রসন্ন ছিল। হালে সে হাজারির পরামর্শে মসলার বাজারে দালালী আরম্ভ করেচে। ছু পয়সা পাচ্ছেও সে । যতীনের মোটা গলার কড়া আওয়াজ পেয়ে হাজারি খুব আগ্রহাম্বিত হয়ে উঠে বসলো। হাজারি বিলক্ষণ জানতো যে, যতীন যখনই আসে কোন একটা দাও বিষয়ে পাকাপাকি খবর না নিয়ে সে আসে না। তাই সে যতীনকে খুবই খাতির করে। যতীন বললে, “দেখ, শুধু দোকানদার হয়ে খদ্দেরের আশায় রাস্তার দিকে ই করে চেয়ে বসে থাকলে তাতে আর টাকা আসে না-ঘুমই আসে। পাচটা খবরাখবর রাখতে হয়, বুঝলে ?” হাজারি বললে, “এসে এসো, যতীন। ভালো আছ ? অনেক দিন দেখি নি। কিছু খবর আছে নাকি ?” “সেই খবর দিতেই তো আসা। এ-বাজারে শুধু গণেশের পায়ে মাথা ঠুকলেই টাকা কর।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৪৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।