১২ বিভূতি-রচনাবলী দল হল্লা করে বেরিয়ে পডল—খোজ খোজ চারিদিকে, খড়ের চালে সত্যিই ফুটো দেখা গেল। সিংহের পায়ের দাগও পাওয়া গেল। কিন্তু সিংহ উধাও হয়েছে। আগুনের কুণ্ডে বেশী করে কাঠ ও শুকনো খড় ফেলে আগুন আবার জালানো হল। সে রাত্রে অনেকেরই ভাল ঘুম হল না, কিন্তু তাবুর বাইরেও বড় একটা কেউ রইল না। শেষ রাত্রের দিকে শঙ্কর নিজের তাবুতে শুয়ে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল—একটা মহা শোরগোলের শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল। মাসাই কুলীর ‘সিম্বা সিম্বা’ বলে চীৎকার করছে। দুবার বন্দুকের আওয়াজ হল। শঙ্কর তাবুর বাইরে এসে ব্যাপার জিজ্ঞাসা করে জানলে সিংহ এসে আস্তাবলের একটা ভারবাহী অশ্বতরকে জখম করে গিয়েছে— এই মাত্র। সবাই শেষ রাত্রে একটু ঝিমিয়ে পড়েছে আর সেই সময়ে এই কাণ্ড । পরদিন সন্ধ্যার ঝোকে একটা ছোকৃর কুলীকে তাবুর একশো হাতের মধ্যে থেকে সিংহে নিয়ে গেল। দিন চারেক পরে আর একটা কুলীকে নিলে বাওবাব, গাছটার তলা থেকে। কুলীরা আর কেউ কাজ করতে চায় না। লম্বা লাইনে গাতিওয়ালা কুলীদের অনেক সময়ে খুব ছোট দলে ভাগ হয়ে কাজ করতে হয়—তারা তাবু ছেড়ে দিনের বেলাতেও বেশি দূর যেতে চায় না। তাবুর মধ্যে থাকাও রাত্রে নিরাপদ নয়। সকলেরই মনে ভয়— প্রত্যেকেই ভাবে এবার তার পালা। কাকে কখন নেবে কিছু স্থিরতা নেই। এই অবস্থায় কাজ হয় না। কেবল মাসাই কুলীর অবিচলিত রইল—তারা যমকে ভয় করে না। র্তাবু থেকে দু-মাইল দূরে গাতির কাজ তারাই করে, সাহেব বন্দুক নিয়ে দিনের মধ্যে চার-পাঁচবার তাদের দেখাশুনা করে আসে । কত নতুন ব্যবস্থা করা হল, কিছুতেই সিংহের উপদ্রব কমল না। কত চেষ্টা করেও সিংহ শিকার করা গেল না। অনেকে বললে—সিংহ একটা নয়, অনেকগুলো—ক’টা মেরে ফেলা যাবে ? সাহেব বললে—মানুষ-খেকো সিংহ বেশী থাকে না। এ একটা সিংহেরই কাজ । একদিন সাহেব শঙ্করকে ডেকে বললে বন্দুকটা নিয়ে গাতিদার কুলীদের একবার দেখে আসতে। শঙ্কর বললে—সাহেব, তোমার ম্যানলিকারটা দাও। সাহেব রাজী হল। শঙ্কর বন্দুক নিয়ে একটা অশ্বতরে চড়ে রওনা হল । তাবু থেকে মাইল খানেক দূরে এক জায়গায় একটা ছোট জলা। শঙ্কর দূর থেকে জলাটা যখন দেখতে পেয়েছে, তখন বেল প্রায় তিনটে । কেউ কোনো দিকে নেই, রোদের বাঝ মাঠের মধ্যে তাপ-তরঙ্গের স্বষ্টি করেছে। হঠাৎ অশ্বতর থমকে দাড়িয়ে গেল। আর কিছুতেই সেটা এগিয়ে যেতে চায় না। শঙ্করের মনে হল জায়গাটার দিকে যেতে অশ্বতরটা ভয় পাচ্ছে। একটু পরে পাশের ঝোপে কি যেন একটা নড়ল। কিন্তু সেদিকে চেয়ে সে কিছু দেখতে পেলে না। সে অশ্বতর থেকে নামল । তবুও অশ্বতর নড়তে চায় না। হঠাৎ শঙ্করের শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। ঝোপের মধ্যে সিংহ তার জন্য ও পেতে বসে নেই তো ? অনেক সময়ে এরকম হয় সে জানে, সিংহ পথের পাশে ঝোপঝাপের মধ্যে
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।