তালনবমী ఇలిని ঠেলে বেরিয়ে আসবার জন্তে কার ভেতর দরজায় ধাক্কা মারচে। শেষ রাতের বাকী সময়টা এইভাবেই শব্দ শুনে কেটে গেল। আরও আশ্চৰ্য্য, ভোর হবার সঙ্গে সঙ্গেই গুদোমঘর থেকে শৰাও আস্তে আন্তে মিলিয়ে গেল। সে রাত্রি এই পৰ্য্যন্ত । পরদিন সকালে মসলাপটির দোকানদারদের মুখে মুখে রাষ্ট্র হয়ে গেল ষে হাজারির দোকানে বিষম কাও, ভীষণ চুরি । আসলে সত্যি ঘ নয় তার দশগুণ বাড়িয়ে দিয়ে মিথ্যে রটাতে লাগলো। ক্রমে কথাটা হাজারির কানে উঠলো। হাজারি বিশ্বাস খবর পাওয়া মাত্র দৌড়ে এসে তালা খুলে গুদোমে ঢুকে দেখে বস্তাগুলো ঠিকই আছে, একটি মালও বেহাত হয়নি। কি ব্যাপার ? তখন সে ভাবলে কিছু নয় ; তার মসলা-বস্তাগুলো দেখে যাদের চোখ টাটিয়েছিল—এ নিশ্চয়ই সেই বদমাশদের মিথ্যে কারসাজি ; তারাই মজা দেখবার জন্তে চুরির গুজব রটিয়েচে, কিন্তু হরে চাকরটাও যে বললে, ভীষণ শক শোনা যাচ্ছিল ? এই শব্দ-রহস্তটা হাজারি কিছুতেই কিনারা করতে পারলে না। চোর যদি এসেই থাকবে, তবে কিছু নিলেও না, উপরন্তু শব্দ করে জানান দিয়ে চলে গেল—এ কি ব্যাপার ? তবে কি তাকে ভয় দেখাবার জন্যেই রাত্রিবেলা দুৰ্ব্বত্তের এই সব আয়োজন করচে ? সাতপাচ ভেবে হাজারি সেদিনকার মতো কথাটা চেপে গেল, ভাবলে আজ রাতে আর বাড়ী না গিয়ে নিজেই দোকান পাহারা দেবে ! করলেও তাই। রাত্রে ঘুমোবার আগে হাজারি বেশ করে চাকরটাকে নিয়ে গুলোমের উপর থেকে আরম্ভ করে নিচে পৰ্য্যস্ত পাতিপাতি প্রত্যেকটি বস্তার গাদা দেখতে লাগলো । তারপর ভেতর থেকে জানলাটা খুলে রেখে ঘরে তালা লাগিয়ে দিল। তবে, আজ একটা নয় —হবসের চার লিভারের দুটো মস্ত ভারী তালা। হাজারি চাকরটাকে নিয়ে ঘরের সামনে শুয়ে নানা কথাবার্তার পর যখন ঘুমিয়ে পড়লে তখন রাত দুপুর । শেষ রাত্রের দিকে কি একটা শব্দ হ’তেই হাজারির ঘুম ভেঙ্গে গেল। হরে চাকরট আগেই একটা শৰ শুনতে পেয়েছিল। গত রাত্রের ব্যাপারও তার বেশ মনে আছে। তাই সে নিজে আর কোন কথা না বলে চুপ করেই পড়ে ছিল। কিন্তু খানিক বাদেই ও আবার কিসের শব্দ ? ধপাস—ধুপ –ছুম্–ছুম্—দাম্ ঘরের ভেতর বস্তায় বস্তায় কি বিষম ধস্তধস্তি! যেন দৈত্য দানবে লড়াই বেধেচে। হরে আর হাজারি তখন ধড়মড় করে এক লাফে বিছানা ছেড়ে আলো জালিয়ে দেখতে লাগলে তালা ঠিক আছে কিনা। তালা দুটো ঠিকই আছে। হাজারি জানলার ফঁাকে চোখ তাকিয়ে দেখতে পেলে—দুটো প্রকাও বস্ত ঘরের ভেতর থেকে দরজায় ঢু মারছে। ভয়ে হাজারির চোখ দুটো ডাগর হয়ে উঠলো। বস্ত জীবন্ত হয়ে উঠলে নাকি ? না, সে চোখে ভুল দেখছে ? না, অনিদ্রায় আর দুর্তাবনায় তার মাথার ঠিক নেই ? হাজারি ভয়ে তয়ে খানিকটা চোখ বুজে রইলো। হাজারি চোখ যখন খুললে তখন ভোরের আলো জানলার গরাদ দিয়ে ধরে স্পষ্ট দেখা দিয়েচে । সঙ্গে সঙ্গে শব্দ-টাও সব থেমে গিয়েচে । হুরে অমনি বলে উঠলে, “বাৰু সেদিনও দেখেচি—তোর হতেই শব্দ থেমে যায়।” হাজারি আর ক্লিক্তি না করে তালা খুলে ধরে
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৫২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।