$8s বিভূতি-রচনাবলী ঢুকে দেখলে কোথাও কিছু নেই। মালপত্র ঠিকই আছে, তবে কালকের থেকে আজ তফাত এই ষে বস্তাগুলো যেটি যে জায়গায় দাড় করানো ছিল, সেটি ঠিক সেখানে নেই। প্রত্যেক বস্তাটিই যেন সরে সরে তফাত হয়ে গেছে। একটা বস্তা আর একটাক্ট ঘাড়ে কাত হয়ে পড়েচে । বিশেষ করে পেছন দিকের কতগুলো বস্ত হাণ্ডুল-বাণ্ডুল অবস্থায় পড়ে রয়েচে —হাজারি মহা ভাবনায় পড়ে গেল। চোরই যদি হয় তবে শব্দের স্বষ্টিপাত কেন ? আর চোর ঢোকেই বা কোথা থেকে ? আর বেরিয়েই বা যায় কেমন করে ? অসম্ভব । তবে কি জাহাজভূবির লোকগুলো ডুবে মরে ভূত হয়ে মসলাবস্তায় ষে যার ঢুকে বসে আছে ? লাটের মাল কিনে অবধি দু'রাত্রি তো এই ভাবে কাটলো। আজ তৃতীয় রাত্রি । হাজারির রোখ অসম্ভব বেড়ে গেছে । আজ সে মরীয়া হয়ে দুজন লোক নিয়ে সারা রাত্রি গুদামের বাইরে জেগে বসে রইলো। হাতের কাছে যাকেই সে পাবে, কিছুতেই আজ আর তাকে আস্ত রাখবে না। তার এই অভীষ্টসিদ্ধি করার জন্তে দিনমানেই সে খুব ঘুমিয়ে নিয়েচে —পাছে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ে। টং টং টং টং—পাশের ঘরের ঘড়িতে চারটে বেজে গেল। হাজারির চোখের পাতা পড়ে না । সে ঠায় জেগে আছে। কোথাও কিছু নেই, কিন্তু হঠাৎ এ কি কাগু ! শত শত লোক একত্র খুব দম দিয়ে নিশ্বাস টেনে ছেড়ে দিলে যেমন একটা ঝড়ের মতো সঁাই সাই করে শব্দ হয়—অবিকল তেমনি একটা শব্দ শোনা গেল। হাজারি আলো জালিয়ে দিয়েই এক লাফে দাড়িয়ে উঠলো ! দরজার দোরগোড়ায় ষে দুটো লোক শুয়ে ছিল, হাজারি চট্ করে তাদের জাগিয়ে দিয়ে বললে, “তোর শীগগির ঘরের পেছনটায় দৌড়ে গিয়ে দেখ দেখি–চোরেরা সেখানে কোন সিদ্ধ কেটেচে নাকি।” তারপর হাজারি গুদোমের তালা খুলে ফেললে । কিসের সিদ্ধ, আর কোথায় বা চোর । বস্তাগুলো ষে সব হাই ছেড়ে সারবন্দী দাড়াতে লাগলো। হরে চকেরটা ভয়ের স্বরে বললে, “বাবু এদিকে চেয়ে দেখুন!”—হাজারি দুই চোখ বিস্ফারিত করে চেয়ে বললে, “এ্যা, বলে কি ? আমার মসলার বস্তারা নাচচে ?” চাকর দুজন এ দৃপ্ত দেখেই তয়ে দে চম্পট। তখন এক অদ্ভূত কাও ! বস্তাগুলো সব একটির পর একটি ঠক্ ঠক্ করে ঠিকূরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। সৈন্ধব লবণের প্রকাও জাদরেল গোছের বস্তাটা তো সৰ্ব্বাগ্রে বেরিয়ে পড়েই সটান গঙ্গার দিকে দে ছুট। অন্য বস্তাগুলো সব সারি দিয়ে ফুটপাতে দাড়িয়ে ধিনিক্ ধিনিক্ করে খানিকটা নেচে নিয়ে তারপর সামনে লাফিয়ে মার্চ করে স্ট্র্যাও রোড ট্রামের রাস্তা ছাড়িয়ে চলতে লাগলো। নিলামে কেনা বস্তাগুলো দলের অগ্রণী হয়ে চলেচে, পেছনে পেছনে চলেচে সারবন্দী গুদোমের অস্ত অন্য বস্তা। এই ভাবে হাজারির মসলার গুদোম উজাড় হয়ে গেল । শেষ রান্ত্রি । আকাশে ভাসা ভাসা মেঘ। গঙ্গার জলে মেটে জ্যোৎস্না । হাজারি বিশ্বাস এক দাড়িয়ে। একি সত্যি, না স্বপ্ন ! নিৰ্ব্বাক হতবুদ্ধি হয়ে দাড়িয়ে সে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখচে । লোক ডেকে চেচিয়ে উঠবে সে শক্তিও তার লুপ্ত। সারবন্দী মসলার বস্তাগুলো
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৫৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।