পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী Չ8, গঙ্গার ধারে পৌঁছলো এবং গঙ্গর উচু বাধানে পোস্তার ওপর থেকে ধপাস ধপাস করে নিচে গঙ্গার জলে দিলে ডুৰ। এইভাবে পরপর সমস্ত বস্তা একে একে গঙ্গার জলে কঁাপিয়ে পড়তে লাগলো! এবারেও আগে ডুবলে নিলামের বস্তাগুলো—তারপর গুদোমের অন্য অন্য বস্ত । এক রান্ত্রির মধ্যে হাজারি বিলক্ষণ নিঃস্ব হয়ে গেল । এই ঘটনা শোনার পর হাজারির প্রতিবেশী দোকানদারেরা সকলেই বিক্সের মতো ঘাড নেড়ে এক বাক্যে বললে, “স্ক, স্থ, আমরা অনেক আগেই জানতুম । ভরা অমাবস্তায় জাহাজভুবি। আর সেই লাটের মাল কিনলে কিপ্টে হাজারি বিশ্বেস! ভাগ্যিস বুদ্ধি করে আমরা ঘোষি নি। এ মাল কিনলে আমাদেরও কি রক্ষা থাকতো।” বাম৷ আমার যখন বাইশ চব্বিশ বছর বয়েস তখন নানা দেশ বেড়ানোর একটা কাজ জুটে গেল আমার অদৃষ্টি। তখন আমি দৈব্য ঔষধের মাদুলি বিক্রি করে বেড়াতুম। চুচড়োর শচীশ কবিরাজের তরফ থেকে মাইনে ও রাহাখরচ পেতুম। অল্প বয়সের প্রথম চাকরি, খুব উৎসাহের সঙ্গেই করতুম। আমাকে কাপডচোপড় পরতে হ’ত সাধু ও সাত্বিক বামুনের মতো। ওটা ছিল ব্যবসায়ের অঙ্গ। গিরিমাটির রঙে ছোপানোর কাপড় পরণে, পায়ে ক্যাম্বিসের জুতো, গলায় মালা, হাতে থাকতো একটা ক্যাম্বিসের বাগ, তারই মধ্যে মাছলি ও অন্যান্য ওষুধ থাকতো। বছর তিনেক সেই চাকরি করি, তারপর শরীরে সইলো না বলে ছেড়ে দিলুম। একবার যাচ্ছি বৰ্দ্ধমান জেলার মেমরি স্টেশন থেকে মাখমপুর বলে একটা গ্রামে। এট। মাদুলি বিক্রির জন্যে নয় ; মাখমপুরে শচীশ কবিরাজের শ্বশুরের বাড়ী। সেখানকার জমিজমার ওয়ারিশান দাড়িয়েছিলেন শচীশবাবু—শ্বশুরের ছেলেপুলে না থাকায়। আমাকে পাঠিয়েছিলেন পৌষ-কিস্তির সময় জমিজমার খাজনা যতটা পারি আদায় করে আনতে। কিন্তু তা হ’লেও পরণে আমার গেরুয়া কাপড়, হাতে মাদুলি ও ওষুধভরা ক্যাম্বিসের ব্যাগ ইত্যাদি সবই ছিল, যদি পথেঘাটে কিছু বিক্রি হয়ে যায়, কমিশনটা তো আমি পাব ! কখনও ও অঞ্চলে যাইনি। মেমরি স্টেশনে নেমে বেলা দুটেfর সময়ে হাটচি তো হেঁটেক্ট চলেচি, পথ আর ফুরোয় না। এক জায়গায় একটা ছোট বাজার পড়লো, সেখানে কিছু খেয়ে নিয়ে আবার পথ স্থাটি । গ্রামে গ্রামে ওষুধ বিক্রি করে বেশ কিছু রোজগারও করা গেল, দেরিও হ’ল বিশেষ করে সেই জন্যে । আর একটা বাজার পড়লো। সেখানে দোকানদারদের কাছে শুনলুম, আমার গন্তব্য স্থানে পৌঁছুতে অন্তত: রাত নটা বাজবে। কিন্তু সকলেই বললে, “সন্ধ্যের পরে আগে গিয়ে অার পথ হাটবেন না, ঠাকুরমশায়। এই সব দেশে ফাস্থডে ডাকাতের বড় ভয়,