পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R8b- বিভূতি-রচনাবলী ছেলেদের মধ্যে দু-একজন সন্ত্রমের সঙ্গে জিগ্যেস করতে, “কি লিখেছে বামাচরণ-দা ? *লিখেছে, এখন চাকরি হবে না, পোস্ট খালি নেই। খালি হলে জানাবে। দাড়া-••” _. তারপর সে পশ্চিমের কোঠায় তার ঘর থেকে একখানা লম্বা খাম নিয়ে এসে তার মধ্যে থেকে ছোট্ট একটা ইংরেজি লেখা কাগজ বার করে সকলের সামনে বাতাসে দুবার উচু করে উড়িয়ে বলতে, “এই দ্যাথ, ।” - কিন্তু এত করেও কিছু হ’ল না, মাসের পর মাস গেল, টি-আই সাহেবের সে চিঠি আর পৌঁছুলো না। হঠাৎ মেঘ-ভাঙা আকাশে একদিন চাদ উঠলো। বামাচরণের পিতা ছিলেন সেকালের ফৌজদারী কাছারীর নাজির । যখন তিনি মেহেরপুরে, সে সময়ে বমপাশ সাহেব মেহেরপুরের জয়েণ্ট ম্যাজিস্ট্রেট । সাহেব নাজিরমহাশয়কে খুবই খাতির করতো, ভালো বাসতো । বামাচরণের বাবা বৃদ্ধবয়সে পেনসনভোগী অবস্থায় নিজের চণ্ডীমণ্ডপে বসে সমবেত বৃদ্ধমণ্ডলীর কাছে চাকরি জীবনের গল্প করতে করতে বলতেন, “বম্পাশ সাহেবকে তো আমিই কাজ শিখিয়েছি, ছোকরা সিভিলিয়ান, নতুন বিলেত থেকে এসেছে তখন—ট্রেজারি অফিসের হিসেব রাখতে রাখতে জান বেরিয়ে যেতো। আমায় বলতে, "শোন নাজির, এ আমার পোষাবে না, গাজা-আফিমের হিসেব রাখতে আর ওজন করতে করতে প্রাণ বেরুলো।’ কত কষ্টে বুঝিয়ে সাহেবকে শাস্ত করতুম।” সে গ্রামে গবর্ণমেণ্টের চাকরি বামাচরণের বাবা ছাড়া কেউ করে নি—সবাই ই৷ করে থাকতো ; পেনসনও ভোগ করচেন তিনি আজ বাইশ-তেইশ বছর কি তারও বেশি। বামাচরণের বয়স যখন আঠারো-উনিশ বছর, তখন বামাচরণের বাবা গ্রামে বসে "হিতবাদী’ কাগজে দেখলেন বম্পাশ সাহেব রেভিনিউ বোর্ডের মেম্বর হয়ে রাইটাস" বিল্ডিংয়ে এসেছে । 象 তিনি গেলেন কলকাতায় সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে । বৰ্মপাশ সাহেবও আর ছোকরা নেই, পঞ্চাশের ওপর বয়স হয়েছে । পুরনো নাজিরকে চিনতে পারলে, জিজ্ঞেস করলে, “আমি তোমার কি উপকার করতে পারি, নাজির ?” এক কথায় বামাচরণের চাকরি ঠিক হয়ে গেল। খুলনায় সার্ডে ক্যাম্প পড়েচে, জমি জরীপ হচ্ছে । বামাচরণের বাবা একগাল হেসে সকলকে কথাটা জানালেন । বামাচরণের বাড়ীতে সত্য-নারায়ণের সিন্নি দেওয়া হ’ল । গায়ের প্রতিবেশীর যখন প্রসাদ থাচ্ছে ভেতরের ঘরের বারান্দায় বসে, তখন বামাচরণের বাবা সবিস্তারে তাদের সামনে তার রাইটাস বিল্ডিংয়ে গিয়ে সাহেবের সঙ্গে দেখা করার বৃত্তান্ত বর্ণনা করছিলেন ; "সাহেব বললে, নাজির, তোমার ছেলে যদি এনট্রান্স পাস করতে তবে আমি ওকে সাবডেপুট্রি করে দিয়ে যেতাম আজ ।”