পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રtto বিভূতি-রচনাবলী বামাচরণের চট করে মনে পড়ে গেল, সে গ্রামের বুড়োদের মুখে শুনেচে এই বঁাকের মুখে আগে—বহুকাল আগে, খুব সমৃদ্ধ গোয়ালাদের গ্রাম ছিল, অনেক লোকের বাস ছিল । কলসীটা জমির ও পর থেকে হাত চার-পাচ নিচে . পোতা অবস্থায় রয়েচে । সেকালে লোকে কলসী করে টাকা পুতে রেখে দিত—এ নিশ্চয়ই টাকার কলসী। বামাচরণ এদিক ওদিক চেয়ে দেখলে আর কেউ কাছাকাছি আছে কিনা। স্থানটা নির্জন, অন্ত লোক এদিকে আসে না। কলসীটা আর কেউ দেখে নি নিশ্চয়ই । তা ছাড়া মোটে কাল রাত্রে এই পাড় ভেঙেচে, কে আর লক্ষ্য করেচে একটা কানাভাঙা কলসী ? কে ই তাঁর পর এসেচে এদিকে ? অবগু নোঁকো থেকে দেখা যাওয়ার কথা। কিন্তু ছেলে-ডিঙি এতদূরে আসে না, গা থেকে ওই কদমতলা পৰ্য্যস্ত তাদের দৌড়। এতদূরে কেউ কোমড় জাল বামাচরণ সেখানে আর দাড়ালে না, ছিপ গুটিয়ে উঠে বাড়ীর দিকে রওনা হ’ল । তাকে এখানে কেউ না দেখে ফেলে। -- বাড়ীতে এসে সে ভাবতে বসলো। এখন সে কি করবে ? আজ রাত্রেই অবহু কলসীটা তুলে আনতেই হবে । কিন্তু একা সে কি করে পারবে ? জমির ওপর থেকে খোড়া অসম্ভব। যদি শাবলের ঘায়ে কলসীটা নদীগর্ভে পড়ে যায়, তা হ’লে স্রোতের মুখে হয়তো কোথায় ভেসে চলে যাবে, নয়তো ডুবে যাবে। তা নয়, নিচে থেকে মই লাগিয়ে উঠতে হবে কলসী পৰ্য্যস্ত, তার পর সস্তপণে খুড়ে কলসী বার করতে হবে । তাতে অন্ততঃ দুজন লোকের দরকার ; মই নিচে থেকে একজন ধরে থাকা চাই, কলসী নামাবার সময়েও সাহায্য পাওয়া দরকার । অনেক ভাবনাচিস্তার পরে বামাচরণ বড় ছেলে নিতাইকে সঙ্গে নেওয়া ঠিক করলে। নিতাই এই বারো বছরে পড়েছে, গ্রাম্য স্কুলে পড়ে, খেলাধুলায় খুব পটু আর সাহসীও বটে। বামাচরণ ছেলেকে বললে, “তোর মাকে বলিস নে, রাত্তিরে যাবি আমার সঙ্গে একটা জায়গায়।” পিতাপুত্ৰে মই, শাবল, একগাছা শক্ত দড়ি নিয়ে রাত দুপুরের পরে নদীর ধারে চট্‌কা গাছটার তলায় এসে দাড়ালো।" বুকের মধ্যে টিপচিপ করচে বামাচরণের, কি জানি কি হয় । বামাচরণের ছেলে কিছুই জানে না কি ব্যাপার, বাবার কথায় সে এসেচে। কেন এসেচে তার বাবা তাকে বলে নি । কিন্তু সে জিনিসটা খানিকটা আন্দাজ করে নিয়েছিল। নিশ্চয়ই জেলের কোথাও জলের ভেতর বাঁশের মুনিতে বড় মাছ জিইয়ে রেখেচে—সেই মাছ চুরি করতে তার বাবা তাকে সঙ্গে করে এনেচে । কিন্তু মই কি হবে ? জায়গাটা দেখেও সে অবাক হয়ে গেল। বাবাকে বললে, “বাব, এতদূরে তো জেলেরা কোমড় ফেলে না ? এ তো চট্ৰকাতলার বাক-••” তার বাবা ওর মুখের দিকে চেয়ে বললে, “জেলেদের সঙ্গে আমাদের কি দরকার ? নে, মইট। এখানে বেশ করে লাগা---"