পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર(t8 বিভূতি রচনাবলী ঠিক গোল আলুর মতো—সে-ই পুড়িয়ে খাইয়েছিল পাহাড়ের ওপরকার জঙ্গল থেকে সংগ্ৰহ করে। পাহাডের এক জায়গায় একটি গুহা দেখিয়ে বলেছিল, .এ গুহা এখান থেকে সুবর্ণরেখার ওপার পর্য্যন্ত চলে গিয়েচে । এ-সব অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশু বড় স্বন্দর। র্যারা ঘন অরণ্যানী, নির্জন শৈলমালার সৌন্দর্য ভালবাসেন তাদের এ সব স্থানে আসা দরকার। বনের মধ্যে মাঝে মাঝে ক্ষীণকায়া পাৰ্ব্বত্য নদী—হয়তো হাটখানেক জল ঝিরঝির করে বইচে পাথরের কুড়ির ওপর দিয়ে। দুধারেই জনহীন বনভূমি, কেঁদ পলাশ ও শালের জঙ্গল, ঘন ও প্রস্তরাকীর্ণ, কত বিচিত্র বন্যপুষ্প, বন্য শেফালির বন । বার বার যাতায়াত করতে করতে ভয় ভেঙে গেল। যখন নিজের চোখে কখনও ভালুক দেখলাম না, বা বুনো হাতীর তাড়া সন্থ করতে হল না, তখন মনে হ’ল অনর্থক কেন একজন গাইড নিয়ে গিয়ে পয়সা খরচ করা । যেতে হয় একাই যাবো । অর্থব্যয় ছাড়া গাইড নিয়ে ঘোরার অন্য অস্ববিধাও ছিল। ধরুন, এক জায়গায় চমৎকার বন্য-পুষ্পের শোভা, পাহাড়ের নীল চুডা স্বনীল আকাশে মাথা তুলে দাড়িয়ে, নিকটেই ক্ষুদ্র পাৰ্ব্বত্য ঝর্ণার মৃদু কলধ্বনি, বনস্পতিদের শাখায় শাখায় বন্য পার্থীর কৃজন,-আমার মনে হ’ল এখানে অদূরবর্তী শিলাখণ্ডে, পিয়াল গাছের স্নিগ্ধ ছায়ায় কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকি, আপন মনে প্রকৃতির এই নিরালা রাজ্যে বসে বনবিহগ-কাকলী শুনি ; কিন্তু গাইড দু’দও স্থির হয়ে বসতে দেবে না, বলবে, "চলো বাবুজী, চলে, এখনও অনেক পথ বাকি !”—তা ছাড়া সঙ্গে লোক থাকলে মনের সে শাস্ত, সমাহিত ভাবও আসে না । এই সব কারণে ইদানীং একাই বেড়াতে যেতাম বনের মধ্যে। কিন্তু যে ঘটনার কথা এখানে বলবো, তার পূৰ্ব্বে স্বর্ণরেখার ওপারে দু'তিন মাইল ছাড়া একা খুব বেশী দূরে যাই নি, বড় জোর গিয়েচি সিদ্ধেশ্বর পাহাড়শ্রেণীর পাদদেশ পর্য্যস্ত। গিয়েচি, আবার বেলা পড়বার অনেক আগেই সুবর্ণরেখার তীরে ফিরে এসেচি। দোলের ছুটিতে এবার গালুডি গিয়ে দেখি অপূৰ্ব্ব নিৰ্ম্মেঘ নীল আকাশ। বনে বনে শাল-মঞ্জরীর স্বগন্ধ, নব বসন্তে নতুন কচি-পাতা-ওঠা শাল, কেঁদ, পিয়াল, মহুয়া গাছে গাছে কুঁড়ি দেখা দিয়েচে । বসন্তের বন্যা এসেচে পাহাড়ী ঝর্ণার মতো নেমে—বিচিত্র বর্ণে, বিচিত্র সজায় বনে বনে । * একজন বৃদ্ধ সাওতালের মুখে শুনেছিলাম পাঁচ মাইল দূরে বনের মধ্যে এক জায়গায় একটা ছোটখাট জলপ্রপাত আছে—জায়গাটার নাম নিশিঝর্ণ। সেখানে নাকি বন আরও ঘন, পথে এক জায়গায় পুরোনো আমলের একটা দেউল আছে ইত্যাদি। জায়গাটা দেখবার খুব ইচ্ছে হ’ল। দোলের আগের দিন বেলা দশটার মধ্যে কিছু খেয়ে নিয়ে জায়গাটার উদ্বেপ্তে বার হয়ে পড়লাম । শীঘ্রই স্ববর্ণরেখা পার হয়ে গিয়ে রাখা মাইন এর পথ ধরলাম। মূসাবনী রোড, যেখানে রাখা মাইনস্-এর চার নম্বর শ্যাফটের গভীর বনের মধ্যে গালুডির পাকা রাস্তার সঙ্গে মিশেচে —সেখানে পৌছতে বেগ প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। তারপর বাধা সড়ক ছেড়ে