পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী ૨?છે হয়ে গেল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমায় বনের মধ্যে যেতে দেখেছিল জুপুরের পরে—বললে, “খুব বেঁচে গিয়েছিল বাৰু, শঙ্খচূড় সাপের সামনে পড়লে আর বঁাচতিস না। ধনঝরির বনে বডড শঙ্খচূড় সাপের ভয় ।” রাতটা সে গ্রামে কাটিয়ে সকালের দিকে স্ববর্ণরেখা পার হয়ে গালুড়িতে ফিরে এলাম । গঙ্গাধরের বিপদ অনেকদিন আগেকাবু কথা । কলকাতায় তখন ঘোড়ার ট্রাম চলে। সে সময় মসলাপোস্তায় গঙ্গাধর কুণ্ডুর ছোটখাটো একখানা মসলার দোকান। গঙ্গাধরের দেশ হুগলি জেলা, চাঁপাডাঙ্গার কাছে। অনেক দিনের দোকান, যে সময়ের কথা বলচি গঙ্গাধরের বয়েস তখন পঞ্চাশের ওপর । কিন্তু শরীরটা তার তালে যাচ্ছিল না। নানারকম অসুখে ভুগতো প্রায়ই । তার ওপর ব্যবসায়ে কিছু লোকসান দিয়ে লোকটা একেবারে মুষড়ে পড়েছিল। দোকান-ঘরের ভাড়া দু-মাসের বাকি, মহাজনদের দেন। ঘাড়ে —ষ্ণুপুর বেলা দোকানে বসে থেলো ছকো হাতে নিয়ে নিজের অদৃষ্টের কথা ভাবছিল। আজ আবার সন্ধ্যের সময় গোমস্ত ভাড়া নিতে আসবে বলে শাসিয়ে গিয়েচে । কি বলা যায় তাকে ] এক পুরোনো পরিচিত মহাজনের কথা মনে পড়ে গেল। তার নাম খোদাদাদ খা, পেশোয়ারী মুসলমান, মেটেবুঝজে থাকে। আগে গঙ্গাধরের লেনদেন ছিল তার সঙ্গে । কয়েকবার টাকা নিয়েচে, শোধও করেচে, কিন্তু স্বদের হার বড় বেশী বলে ইদানীং বছর কয়েক গঙ্গাধর সেদিকে যায় নি । ভেবেচিস্তে সে মেটেবুরুজেই রওনা হ’ল। স্বদ বেশি বলে আর উপায় কি ? টাকা না আনলেই নয় আজ সন্ধ্যের মধ্যে । মেটেবুরুজে গিয়ে খোদাদাদ খায়ের নতুন বাস খুজে বার করতে, টাকা নিতে দেরি হয়ে গেল। খিদিরপুরের কাটিগঙ্গা পার হয়ে এসে ট্রাম ধরবে, হনহন করে হেঁটে আসচে—এমন সময়ে একজন লোক তাকে ডেকে বললে, “এ সাহেব, ইধার শুনিয়ে তো জরা,--” সন্ধ্যে হয়ে গিয়েচে । যেখান থেকে লোকটা তাকে ডাকলে সেখানে কতকগুলো গাছপালার বেশ একটু অন্ধকার। স্থানটা নির্জন, তার ওপর আবার তার সঙ্গে রয়েচে টাকা। গঙ্গাধরের মনে একটু সন্দেহ যে না হ’ল এমন নয়। কিন্তু উপায় নেই, লোকটা এগিয়ে এলো। ওই গাছগুলোর তলায়—সে যেন তারই প্রতীক্ষায় দাড়িয়েছিল। লোকটা খুব লম্বা, মাথায় বাকড় বাকড়া চুল ঘাড়ের ওপর পড়েচে, মুখটা ভালো দেখা যাচ্ছে না। পরনে ঢিলে ইজের ও আলখাল্লা। সে কাছে এসে স্থর নিচু করে হিন্দীতে ও তাড়া বাংলায় মিলিয়ে বললে, “বাৰু, সন্তায় মাল কিনবেন?” .