২৬e বিভূতি-রচনাবলী গঙ্গাধর আশ্চৰ্য্য হয়ে বললে, “কি মাল ?” লোকটা চারিদিকে চেয়ে বলেলে, “এখানে কথা হবে না বাৰু, গুলিস ঘুরচে, আমার সঙ্গে আস্বন•••* ঝুপ সি গাছের তলায় এক জায়গায় অন্ধকার খুব ঘন। সেখানে গিয়ে লোকটা বললে, “জিনিসটা কোকেন। খুব সস্তায় পাবেন। ডিউটি-ফুট মাল—লুকিয়ে দেব ।” গঙ্গাধর চমকে উঠলো। সে কখনো ও ব্যবসা করে নি। ডিউটি-ছুট কোকেন—কি সবব নেশে জিনিস। ভালো লোকের পাল্লায় সে পড়েচে । না—সে কিনবে না। লোকটা সম্ভবতঃ পাঞ্জাবী মুসলমান। বাংলা বলতে পারে—তবে বেশ একটু বাকা । আমুনয়ের স্বরে বলে, “বাবু, আপনি নিন। আপনার ভালো হবে । সিকি কড়িতে দেবো.-- আমার মুশকিল হয়েচে আমি মাল বিক্রির লোক খুজে পাচ্ছিনে। ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি কত জায়গায়—আবার সব জায়গায় তো যেতে পারিনে, পুলিসের ভয় তো আছে ? কেউ কথা কইচে না আমার সঙ্গে ; সেই হয়েচে আরও মুশকিল। হঠাৎ শহরে এত পুলিসের ভয় হ’ল যে কেন বাবু তা বুঝিনে। আগে যারা এ-ব্যবসা করতে, তাদের কাছে যাচ্ছি, তারা আমার দিকে চেয়েও দেখচে না।•••আপনি গররাজি হবেন না বাৰু—মাল দেখুন পরে দামদপ্তর হবে---” লোকটার গলার স্বরে একটা কি শক্তি ছিল, গঙ্গাধরের মন খানিকটা ভিজলো । কোকেনের ব্যবসাতে মাহুষ রাতারাতি বড় লোক হয়েচে বটে। বিনা সাহসে, বিপদ এড়িয়ে চলে বেড়ালে কি লক্ষ্মীলাভ হয় ? দেখাই যাক না । হঠাৎ গঙ্গাধর চেরে দেখলে যে লোকটা নেই সেখানে । এই তো দাড়িয়েছিল, কোথায় গেল আবার ? পাছে কেউ শোনে এই ভয়ে বেশী জোরে ডাকতেও পারলে না। চাপা গলায় বাঙালী-হিন্দীতে ডাকলে, “কোথায় গিয়া, ও খাসাহেব ?” এদিকে ওদিকে চাওয়ার পর সামনে চাইতেই দীর্ঘাকৃতি আলখাল্লাধারী খাসাহেবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। গঙ্গাধর বললে, "জলদি চলো, অনেক দূর স্বানে হোগা।” কি একটা যেন ঢাকবার জন্তে লোকটি প্রাণপণে চেষ্টা করচে । “আমার সঙ্গে এসো, মাল দেখাবো।” দুজনে কাটিগঙ্গার ধারে ধারে অনেক দূর গেল। ষে সময়ের কথা বলচি, তখন ওদিকে অত লোকজন ছিল না । মাঝে মাঝে জোয়ার নেমে যাওয়াতে বড় বড় ভড় ও নোঁকে কাদার ওপর পড়ে আছে, দু-একটা করাতের কারখানা, তাও দূরে দূরে—জলের ধারে নোনা চাদাৰ্কাটার বন, পেছনে অনেক দূরে খিদিরপুর বাজারের আলো দেখা शांछिछ् । পথে যেতে যেতে খাসাহেব একটা বড় অদ্ভূত প্রশ্ন করলে। গঙ্গাধরের দিকে চেয়ে বললে, *আমায় দেখতে পাচ্ছ তো ? •••:
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৭৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।