পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

#२७8 বিভূতি-রচনাবলী শরীর ও মন দুইই-বড় ক্লান্ত। এমন সময় রাজকুমার কক্ষে ঢুকে পিতাকে প্রণাম করে এক পাশে দাড়িয়ে রইলেন। রাজা বললেন, “চন্দ্ৰসেন, তোমার কিছু বলবার আছে ?” রাজপুত্র বিনীত অথচ দৃঢ়ম্বরে বললেন, “বাবা, গত বছর যখন গুরুগৃহ থেকে ফিরে আসি তখন আপনি বলেছিলেন আমায় কিছুদিন দেশভ্রমণে যাবার অনুমতি দেবেন। আপনার অস্বখের জন্তে এতদিন কোন কথা বলি নি। আমি এইবার সে বিষয়ে অনুমতি চাই ।” মহারাজা বিস্মিতত্ত্বরে বললেন, “কি বিষয়ে অনুমতি চাই বলে ?” *আমি দেশভ্রমণে যেতে চাই বাবা।” “তুমি জানো তোমার যৌবরাজ্যের অভিষেকের সব আয়োজন করা হয়েচে ।” “সেই জন্তেই তো আরও বেশি করে যেতে চাই, বাবা। আমি কাঞ্চী ছাড়া জীবনে কখনও কিছু দেখলুম না, কিছু জানলুম না,—কানে শুনেচি উত্তরে হিমবান পৰ্ব্বত আছে, দক্ষিণে সমূদ্র আছে, পশ্চিমে সিন্ধুনদ আছে—কাঞ্চী ছাড়া আরও কত রাজদেশ আছে, কিন্তু উনিশ-কুড়ি বৎসর বয়সে আমি চোখ থেকেও অন্ধ। যার জীবনে কোনও অভিজ্ঞতা নেই, তাকে দিয়ে দেশ-শাসন কি করে হবে । আমায় যেতে দিন বাবা ” এর দুদিন পরে রাজ্যের লোক সবিস্ময়ে শুনলে রাজকুমার চন্দ্রসেনের অভিষেক-উৎসব সম্প্রতি স্থগিত থাকলো—কারণ তিনি চলেছেন বিদেশ ভ্রমণে–একা, সঙ্গে তিনি কাউকে নিতে রাজী নন। * সত্যই রাজকুমার কাউকে সঙ্গে নেন নি। আজ সপ্তাহ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, চন্দ্ৰসেন তার প্রিয় সাদা ঘোড়াটিতে চড়ে এক পথ চলেচেন। আর সঙ্গে থাকবার মধ্যে বঁাদিকে খাপে-ঝোলানো পিতৃদত্ত তলোয়ারখানি। আর আছে চোখে অসীম তৃষ্ণ, বুকে অদম্য সাহস ও নির্ভীকতা। কাঞ্চী বুজ্যের সীমা ছাড়িয়েও দু’দিনের পথ চলে এসেছেন, কত গ্রাম, মাঠ, বন, নদী পার হয়ে চলেচেন—সবই অচেনা, এ র্তার নিজের রাজ্য কাঞ্চী নয়, এখানে তিনি একজন অজানা পথিক মাত্র। তখনও স্বৰ্ষ অস্ত যায় নি। এক নদীর ধারে তার ঘোড়া এসে পৌঁছুলো তাকে নিয়ে। প্রকাগু নদী—বৈকালের রাঙা আলোয় ওপারের বনরেখা অপূৰ্ব্ব দেখাচ্ছে। অতবড় নদী কি করে পার হবেন, রাজকুমার চিস্তায় পড়লেন। কোনোদিকে মানুষের বাসের চিহ্ন নেই— সন্ধ্যার ছায়া ক্রমে ধূসর হয়ে এলো। বিজন নদী—তীরের ছন্নছাড়া চেহারাটা স্বমুখ-আঁধার রাতে গাঢ় ছায়ায় যেন আরও বেশি ছন্নছাড়া হয়ে ফুটে উঠলো। ওপারে বহু দূরে একটা পাহাড়–নীল চুড়া একটু একটু চোখে পড়ে। রাজকুমার চেয়ে থাকতে থাকতে পাহাড়ের ওপর থেকে আগুনের রাঙা একটা হলকা হঠাৎ আকাশের পানে লকৃ লক্ করে জলে উঠেই দপ করে নিবে গেল। রাজপুত্র অবাক হয়ে সেদিকে চেয়েই আছেন এমন সময় একটা প্রকাণ্ড বাজপক্ষী সন্ধ্যার আকাশে ডানা মেলে নদীর উজান দিক থেকে উড়ে এসে তার মাথার ওপর তিন চার বার চক্রাকারে ঘুরে আবার কোনদিকে অদৃপ্ত হোল ।