তালনবমী ২৬৫ রাজকুমারের নির্ভীক মনও একটুখানি কেঁপে উঠলো। তিনি জানতেন তাদের বংশে কারুর মৃত্যুর পূৰ্ব্বে তার মাথার ওপর গৃধ্ৰুজাতীয় পাখী তিনবার ওড়ে—কেউ কেউ বলেচেন, বিশেষ করে শাকুন-শাস্ত্ৰবিং কোন গণৎকার সেবার বলেছিলেন যে, এই গৃধ্ৰ তাদের পূৰ্ব্বপুরুষদের হাতে অন্যায়ভাবে অবিচারে নিহত কোনো শত্রুর আত্মা—বহুকাল ধরে সে পৈশাচিক উল্লাসের সঙ্গে জানিয়ে দিয়ে যায় নিজ শক্রর বংশধরের মৃত্যুর পূর্বাভাস। কোথা থেকে আসে, কোথায় আবার উড়ে চলে যায়—কেউ বলতে পারে না । রাতের সঙ্গে সঙ্গে এল হাড়ৰ্কাপুনে ধারালো শীত। একটা বড় গাছও কোথাও নেই যার তলায় আশ্রয় নিতে পারেন। অবশেষে একটা মাটির ঢিপির পেছনে ঘোড়া থেকে নেমে রাজপুত্র নিজের আসন বিছালেন—সেখানটাতে হাওয়া বেশি লাগে না—শুক্নো লতাকাঠি কুড়িয়ে আগুন জালানোর ব্যবস্থা করে সে রাত্রের মতো তিনি সেখানেই রইলেন। উপায় কি ? গভীর রাত্রে রাজপুত্রের ঘুম ভেঙে গেল। বহুদূরে যেন কাদের আর্তনাদ—মৃত্যু-পথের পথিকদের অস্তিম চীৎকারের মতো করুণ। রাজপুত্র নিজের অলক্ষিতে একবার শিউরে উঠলেন। শয্যার পাশের আগুন নিবে গিয়েচে, উঠে ভালো করে আগুন জলিলেন । সারারাত্রির মধ্যে ঘুম আর এলো না কিন্তু। ভোরের দিকে একটা ডিঙি পাওয়া গেল। তাতে পার হয়ে রাজকুমার ওপারে গিয়ে উঠলেন। ডিঙির মাঝি আধ-পাগল এবং বোধ হয় কানে আদৌ শুনতে পায় না। রাজকুমারের প্রশ্নের কোন উত্তর সে দিতে পারলে না। প্রথমে একটা মরুভূমির মতো মাঠ—ঘাস, খড়, গাছপালা কিছুই নেই—কট-রঙের বালির পাহাড় এখানে-ওখানে। অনেক দূরে গিয়ে একটা জনপদ। কিন্তু কেমন একটা নিরানন্দ ভাব চারদিকে। পথ দিয়ে পথিক চলে না, দোকান-পসারে খদের নেই, নদীর ঘাটে স্নানার্থীর দল নেই, মাঠে চাষার চাষ করে না—যেন কেমন একটা বিষাদ ও অমঙ্গলের ছায়া চারিদিকে । o রাজকুমার ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় বড় কাতর হয়েছিলেন। নিকটেই একটি গৃহস্থের বাড়ী। সেখানে গিয়ে আশ্রয় চাইতেই তারা খুব যত্বের সঙ্গে আশ্রয় দিলে। অনেকদিন পরে রাজকুমার ভালো খাবার খেলেন, ভালো বিছানায় বিশ্রাম করতে পেলেন, মামুষের সঙ্গ অনেক দিন পরে বড় প্রিয় মনে হ’ল । কয়েকদিন সেখানে রয়ে গেলেন তিনি। গৃহস্থের একটি ছোট মেয়ে ও ছোট ছেলের সঙ্গে রাজকুমারের বড় ভাব হ’ল। তারা তাকে ফুল তুলে মালা গেঁথে দেয়, দুপুরে তার কাছে বলে গল্প শোনে, তাদের শত আবদার প্রতিদিন র্তাকে সহ করতে হয়। ছোট ছেলেটির উপদ্রবের তো আর অন্ত নেই। অল্পদিনের মধ্যে রাজকুমার সে বাড়ীর সবারই তো বটেই, গ্রামেরও সকল লোকের প্রীতি ও শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠলেন। এত স্বন্দর মুখশ্ৰী, এমন স্বন্দর কাস্তি, এমন মিষ্টি স্বভাবের মানুষ তারা কখনও দেখি নি। রাজকুমারের আসল পরিচয় কেউ জানে নি। তিনি ۹لا-م .f A. g
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৭৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।