তালনবমী - • ২৬৭ তরুণ অতিথির, আর একটা কাপালিকের—দেখে মনে হয় দুজনেই পরম্পরকে অস্ত্রাঘাত করেচে। দলে দলে স্ত্রী পুরুষ সবাই ছুটে এলো দেখতে। যে নিজের প্রাণ দিয়ে তাদের চিরকালের জন্তে বিপদমুক্ত করে গেল—রাজার ভয়ে গোপনে চোখের জলে ভেসে তার শেষ সৎকার সম্পন্ন করলে । রাজকুমারের সত্যিকার পরিচয় সে দেশের লোক তখনো জানে নি । o চাউল মানভূমের টাড় ও জঙ্গল জায়গা। একটু দূরে বড় পাহাড়শ্রেণী, অনেক দূর পর্য্যন্ত বিস্তৃত। বসন্তকালের শেষ, পলাশ ফুল বনে আগুন লাগিয়ে দিয়েচে, নাকটিটাড়ের উচু ডাঙা জমি থেকে যতদূর দেখা যায়, শুধু রক্তপলাশের বন দুরে নীল শৈলমালার কোল ছুয়েছে। জঙ্গল দেখতে এসেচি এদিকে, কাছেই রাস্তার ধারে পলাশবনের প্রাস্তে ডাকবাংলোতে থাকি, জঙ্গলের কাঠে কেমন আয় হবে তাই দেখে বেড়াই। একদিন সন্ধ্যের আগে নাকটিটাড়ের বন দেখে ফিরচি, পথের ধারে একটা হরিতকী গাছের তলায় একটি লোক ও একটি ছোট মেয়ে বসে পুটুলি খুলে কি খাচ্ছে। জনহীন পথিপার্শ্ব, কেউ কোনদিকে নেই-সন্ধেরও আর অল্পই বিলম্ব, সামনে বাঘমুণ্ডীর বনময় পথ, এমন সময় লোকটা কি করে জানবার আগ্রহে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। লোকটার চেহারা দেখে বয়স অনুমান করা শক্ত। মাথার চুল কিছু পাক, কিছু কাচা । পুটুলির মধ্যে খানদুই ছেড়া নেকড়া, একখানা কাথা আর কিছু মকাই—সের দুই হবে, একটা খালি চায়ের কিংবা বিস্কুটের টন। বোধ হয় সেটাই তৈজসপত্রের অভাব পূর্ণ করচে সব দিক দিয়ে। সঙ্গের মেয়েটির বয়স চার কি পাচ। পরণে ছোট্ট একটু ময়ল নেকড়া মেয়েটার, কোমরে ঘুলী । আমি বললাম, “কোথায় যাবে হে, বাড়ী কোথায় ?” . লোকটি মানভূমি বাংলায় বললে, “তোড়াং হে"-টুকু আগুন আছে ।” “দেশলাই ? আছে, দিচ্ছি।•••তোড়াং কতদূর এখান থেকে ?” “টুকু দূৰ্ব আছে বটে। পাঁচ কোশ হবেক ।” “কোথা থেকে আসা হচ্ছে এমন সন্ধ্যেবেলা ?” “হেই সেই পুরুলিয়া থিকে।---আগুন দাও বাৰু। শোরিল একেবারে কাবু হয়ে গিয়েছে। aছ মেয়েটার মা মরে গেল ওর দু’বছর বয়সে। ওকে রেখে জঙ্গলে কাঠের কাম করতে যাইতে পারি নাই—তাই পুরুলিয়া গেইছিলি। ভিক্ষ মাণ্ডি দু’বছর বইয়েছিলি।” লোকটির কথাবার্তার ধরণ আমাকে আকৃষ্ট করলে। ডাক-বাংলোতে সন্ধ্যার সময় ফিরেই বা কি হবে এখন ? সেখানেও সঙ্গিহীন ঘর-দোর। তার চেয়ে একটু গল্প করা স্বাকৃ এর সঙ্গে। কাছে একটা বড় পাথর পড়েছিল, সেটার ওপর বসে, ওকে একটা বিড়ি দিলাম।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৮০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।