পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী ૨૭છે দাও।” রোজ গোলমাল করে, তাই আজ তিন দিন শহর থেকে বেরিয়ে জন্মভূমি তোড়াং গ্রামে চলেচে । ছোট মেয়েটা এতক্ষণ খালি বিস্কুটের টিন হাতে করে বাজাছিল। ওর দিকে সস্নেহদৃষ্টিতে চেয়ে লোকটা বললে, “এর নাম রৈখেছে থুপী।” আমি বাপের মনে আনন্দ দেবার জন্তে বললাম, খুণী ? বেশ নাম।” বাপ সগৰ্ব্বে বললে, “ই থুপী ।” তারপর আমায় বললে, “বাৰু, তামাক কিনবার পয়সা দিবেন দুটি ?” আমি পয়সা সামান্তই নিয়ে বেড়াতে বার হয়েচি, জঙ্গলের পথে পয়সা কি করবো ? ওকে দুটি মাত্র পয়সা দিতে পারলাম। খুপী কি একটা বললে ওর বাবাকে, বাবা তাকে কাধে নিয়ে চললো। আমি চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলাম— রাস্ত যেখানে উচু হয়ে ওদিকের সব দৃপ্ত ঢেকে দিয়েচে, সেখানে ওর পাচ বছরের মেয়েটিকে কাধে নিয়ে পুটুলি বগলে ও চলেচে- সেদিকেই অস্তদিগন্ত ও স্বৰ্য্যাস্ত, রঙীন আকাশের পটে ওর মূৰ্ত্তি দেখাচ্ছে ছবির মতে, কারণ আগেই বলেছি রাস্তা উচু হওয়ার দরুণ সেখানে আর কিছু দেখা যায় না, রাস্তাই সেখানে চক্রবালরেখার স্বষ্টি করেচে। মনে মনে ভাবলাম, ওর কোথাও অল্প নেই, গৃহ নেই-পাঁচ বছরের মেয়েকে কত স্নেহে কাধে তুলে ও যে চললো গ্রামের দিকে, সেখানে অন্ন কি জুটবে এ দুৰ্দ্দিনে,—খদি পুরুলিয়া শহরে না জুটে থাকে ? কোন বৃথা আশার আকর্ষণ ওকে নিয়ে চলেচে গ্রামের মুখে । তার পরেই সে অদৃপ্ত হয়ে গেল ।••• এ হ’ল গত মাসের কথা। তখনও চাল ছিল ষোল টাকা আঠারো টাকা মণ, ক্রমে তাই দাড়ালে৷ বত্রিশ টাকা, চল্লিশ টাকা। এই সময় একবার কার্য্য উপলক্ষে বিহার থেকে আমায় যেতে হ’ল বাংলাদেশে, পূর্ববঙ্গের কুমিল্লা জেলায়। মানুষের এমন কষ্ট কখনো চোখে দেখি নি—চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত হবে। যে আত্মীরের বাড়ী ছিলাম তাদের বাড়ীতে সন্ধ্যা থেকে কত রাত পৰ্য্যস্ত শীর্ণ বুভূক্ষ, কঙ্কালসার বালকবালিক, বৃদ্ধ, প্রৌঢ় কালো হাড়ি উচু করে তুলে দেখিয়ে বলচে,—“একটু ফেন দিন মা, একটু ফেন I” অনাহারে মৃত্যুর কত মৰ্ম্মম্ভদ কাহিনী শুনে এলাম সারা পথ কুমিল্লা থেকে বেরিয়ে পৰ্য্যন্ত—স্টীমারে, ট্রেনে । বিহারে এসে দেখি এখানেও তাই । বহেরাগোড়া স্কুলের বোর্ভিঙে ড়েন দিয়ে যে ভাতের ফেন গড়িয়ে পড়ে তাই ধরে খাবার জন্যে একপাল বুভুক্ষু ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়ি হাতে দুবেল বসে থাকে—তারই জন্তে কি কাড়াকড়ি। হেডমাস্টার বললেন, “এই গ্রামের ডোম আর কাহারদের ছেলেমেয়ে এখানেই পড়ে আছে ভাতের ফেনের জন্যে—সকাল থেকে এসে জোটে আর সারাদিন থাকে, রাত ন’টা পর্যন্ত । সামান্ত দুটো ভাতের জন্তে কুকুরের সঙ্গে কাড়াকড়ি করে।” পুরুলিয়া থেকে আত্রা যাচ্ছি, প্ল্যাটফর্মের খাবারের দোকানে খাবার খেয়ে পাতা ফেলে