তালনবমী ২৭১ প্রত্যেক কুলির মুখেই শুনেচি—শেষে এখানে ও এসে পড়লো মজুরি, বিশেষ করে চাল পাওয়ার লোতে। পয়সা দিলেও গ্রামে আজকাল চাল মিলচে না, আমি সেদিন বহেরাগোড়া অঞ্চলে দেখে এসেছি। এ্যাম্বুলেন্স, গাড়ী এলো। ধরাধরি কৰে থুপীর বাবাকে গাড়ীতে ওঠানো হল—সে কেবলমাত্র একবার যন্ত্রণালুচক 'আঃ' শব্দ উচ্চারণ করা ছাড়া অত আদরের অত গৰ্ব্বের বস্তু খুপীর নামও করলে না, তার দিকে ফিরেও চাইলে না । ডাক্তার বললেন, “টাটা এখান থেকে সাতাশ মাইল রাস্ত। বাকুনিতেই বোধ হয় মারা যাবে—বিশেষ করে রক্ত বন্ধ হল না যখন এখনো।” দুধারে শালবনের মধ্যবৰ্ত্তা রাঙা মরুম মাটির সোজা রাস্তা বেয়ে এ্যাম্বুলেন্সের মোটর ছুটল থুপীর বাবাকে নিয়ে—পুনরায় অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের দিকে, পুনরায় পশ্চিমের আকাশ লক্ষ্য করে জন্ম থেকে মৃত্যুর দিকে। অতি সাধের অনাথ খুপীকে কার কাছে রেখে চললে সে হিসেব নেবার অবসর তখন তার নেই।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৮৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।