২৭৬ বিভূতি-রচনাবলী অবনী বললে—মামা, তোমাদের বড় শতরঞ্জি আছে ? —একখানা দালানজোড় শতরঞ্জি ছিল জানি–কিন্তু সেটা ছিড়ে গিয়েছে জায়গায় জায়গায় । —ছেড়া শতরঞ্জি আমার চলবে না। তাহলে কলকাতায় লোক পাঠিয়ে ভাল একখানি বড় শতরঞ্জি কিনে আনি, বন্ধুবান্ধব পাঁচজনে আসবে, তাদের সামনে বার করার উপযুক্ত হওয়া চাই তো!—বড় আলো আছে ? s - —বাতির ঝাড় ছিল, এক-এক থাকে র্কাচ খুলে গিয়েছে—তাতে চলে তো নিও। —তোমাদের তাতেই কাজ চলে ? —কেন চলবে না ? দেখায় খুব ভাল। তা ছাড়া দুর্গোৎসবের কাজ দিনমানেই বেশি —রাত্রে আরতি হয়ে গেলেই আলোর কাজ তো মিটে গেল । —আমার ডে-লাইটের ব্যবস্থা করতে হবে দেখছি। কালীপূজোর রাতে আলোর ব্যবস্থা একটু ভালরকম থাকা দরকার। ইলেকট্রিক আলোয় বারো মাস বাস করা অভ্যেস, সত্যি, পাড়াগায়ে এসে এমন অস্থবিধে হয় ! বৃদ্ধ সত্যনারায়ণ গাঙ্গুলী তার ছোট ছেলের একটা চাকুরির জন্যে অবনীর কাছে ক-দিন ধরে ইঁাটাইটি করে একটু—অবিখি খুব সামান্তই একটু—ভরসা পেয়েছিলেন, তিনি অমনি বলে উঠলেন—ত অস্ববিধে হবে না ? বলি তোমরা বাবাজী কি রকম জায়গায় থাকে, কি ধরনে থাকো—ত আমার জানা আছে তো ! গঙ্গাচানের যোগে কলকাতা গেলেই তোমাদের ওখানে গিয়ে উঠি, আর সে কী যত্ন ওঃ, ইলেকটিরি অালো না হলে কি বাবাজী তোমাদের চলে ? স্বশীল কলকাতায় দু-একবার মাত্র গিয়েছে,--আধুনিক সভ্যতার যুগের বহু নতুন জিনিসই তার অপরিচিত—শিক্ষিত ও শহুরে বাবু অবনীর সঙ্গে ভয়ে ভয়ে তাকে কথা বলতে छ्ध्न । তবুও সে বললে—ডে-লাইটের চেয়ে কিন্তু ঝাড়-লণ্ঠন দেখায় ভাল— অবনী হেসে গড়িয়ে পড়ে আর-কি ! —ওহে ধে যুগে জমিদারপুত্রের নিষ্কর্য বসে থাকত আর হাতিতে চড়ে জরদগবের মত ঘুরে বেড়াতে—ওসব চাল ছিল সেকালের । মডার্ন যুগে ও সব আচল, বুঝলে মামা ? এ হল প্রগতির যুগ-হাতির বদলে ইলেকট্রিক লাইট—সেকালকে অঁাকড়ে বসে থাকলে চলবে ? বনেদি পুরোনো আমলের চালচলনে আবাল্য অভ্যস্ত স্বশীল। বয়সে যুবক হলেও প্রাচীনের ভক্ত । সে বললে—কেন, হাতি চড়াটা কী খারাপ দেখলে ? --রামোঃ ! জবড়জং ব্যাপার। হাতির মত মোটা জানোয়ারের ওপর বসে-থাকা পেট মোটা নাস্থস হল—
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৮৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।