বিভূতি-রচনাবলী טאג পরদিনের সকালের ট্রেনে গার্ডের গাড়ী থেকে একটা নতুন কুলী তার রসদের বস্ত নামিয়ে দিতে এল। সপ্তাহে দুদিন মোম্বাস থেকে চাল আর আলু রেলকোম্পানী এই সব নির্জন স্টেশনের কৰ্ম্মচারীদের পাঠিয়ে দেয়—মাসিক বেতন থেকে এর দাম কেটে নেওয়া হয় । যে কুলীট রসদের বস্তা নামিয়ে দিতে এল সে ইণ্ডিয়ান, গুজরাট অঞ্চলে বাড়ী। সে বস্তাটা নামিয়ে কেমন যেন অদ্ভুত ভাবে চাইলে শঙ্করের দিকে, এবং পাছে শঙ্কর তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, এই ভয়েই ধেন তাড়াতাড়ি গাড়ীতে গিয়ে উঠে পড়ল। কুলীর সে দৃষ্টি শঙ্করের চোখ এড়ায় নি। কি রহস্য জড়িত আছে যেন এই জায়গাটার সঙ্গে, কেউ তা ওর কাছে প্রকাশ করতে চায় না—প্রকাশ করা যেন বারণ আছে। ব্যাপার কি ? দিন দুই পরে ট্রেন পাশ করে সে নিজের কোয়ার্টারে ঢুকতে যাচ্ছে—আর একটু হলে সাপের ঘাড়ে পা দিয়েছিল আর কি! সেই খড়িশ গোখরো সাপ। পূৰ্ব্বদৃষ্ট সাপটাও হতে পারে, নতুন একটা যে নয় তারও কোনো প্রমাণ নেই। { শঙ্কর সেই দিন স্টেশনঘর, নিজের কোয়ার্টার ও চারধারের জমি ভাল করে পরীক্ষা করে দেখলে। সারা জায়গা মাটিতে বড় বড় গৰ্ত্ত, কোয়ার্টারের উঠানে, রান্নাঘরের দেওয়ালে, কাচ প্ল্যাটফর্শ্বের মাঝে মাঝে সৰ্ব্বত্র গৰ্ত্ত ও ফাটল আর ইদুরের মাটি। তবুও সে কিছু বুঝতে পারলে না। একদিন সে স্টেশন ঘরে ঘুমিয়ে আছে, রাত অনেক। ঘর অন্ধকার—হঠাৎ শঙ্করের ঘুম ভেঙে গেল। পাচটা ইন্দ্রিয়ের বাইরে আর একটা কোন ইন্দ্রিয় যেন মুহূর্বের জন্যে জাগরিত হয়ে উঠে তাকে জানিয়ে দিলে যে সে ভয়ানক বিপদে পড়বে। ঘোর অন্ধকার, শঙ্করের সমস্ত শরীর যেন শিউরে উঠল। টর্চটা হাতড়ে পাওয়া যায় না কেন ? অন্ধকারের মধ্যে যেন একটা কিসের অস্পষ্ট শব্দ হচ্ছে ঘরের মধ্যে। হঠাৎ টর্চটা তার হাতে ঠেকল এবং কলের পুতুলের মত সে সামনের দিকে ঘুরিয়ে টর্চটা জাললে। সঙ্গে সঙ্গে সে ভয়ে বিস্ময়ে কাঠ হয়ে টর্চটী ধরে বিছানার ওপরই বসে রইল। দেওয়াল ও তার বিছানার মাঝামাঝি জায়গায় মাথা উচু করে তুলে ও টর্চের আলো পড়ার দরুন সাময়িক ভাবে আলো-অাঁধার লেগে থ’ খেয়ে আছে আফ্রিকার ক্রুর ও হিংস্রতম সপ—কালো মাম্বা ! ঘরের মেজে থেকে সাপটা প্রায় আড়াই হাত উচু হয়ে উঠেছে— সেটা এমন কিছু আশ্চৰ্য্য নয় যখন ব্ল্যাক মাম্বা সাধারণত: মানুষকে তাড়া করে তার ঘাড়ে ছোবল মারে। ব্ল্যাক মাম্বার হাত থেকে রেহাই পাওয়া একপ্রকার পুনর্জন্ম তাও শঙ্কর শুনেছে । শঙ্করের একটা গুণ বাল্যকাল থেকেই আছে, বিপদে তার সহজে বুদ্ধিভ্রংশ হয় না—আর তার স্বায়ুমণ্ডলীর উপর সে ঘোর বিপদেও কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে। শঙ্কর বুঝলে হাত যদি তার একটু কেঁপে যায়—তবে যে মুহূৰ্ত্তে সাপটার চোখ থেকে
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।