হীরামানিক জ্বলে &ዓፄ সত্যনারায়ণ গাজুলী বললেন—গোবর-গণেশ– —জমিদারের ছেলেরই শোভা পায়, কিন্তু কাজে যারা ব্যস্ত, সময় যাদের হাতে কম, দিনে যাদের ত্রিশ মাইল চক্কর দিয়ে বেড়াতে হয় নিজের কাজে বা অাপিসের কাজে— তাদের পক্ষে দরকার মোটর বাইক বা মোটরকার । স্মার্ট ধারা—তাদের উপযুক্ত যানই হচ্ছে— + স্বশীল প্রতিবাদ করে বললে—স্বার্ট কারা জানি নে ; মোগল বাদশাদের সময় আকবর আওরঙ্গজেবের মত বীর হাতিতে চড়ে যুদ্ধ করত –তারা স্মার্ট হল না—হল তোমাদের কলকাতার আদির-পাঞ্জাবি-পরা চশমা-চোখে ছোকরা বাবুর দল, যারা বাপের পয়সায় গড়ের মাঠে হাওয়া স্থায়—কিংবা শখে পড়ে দু-দশ কদম মোটর ড্রাইভ করে, তারা ? আত বড় সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিল চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য, তার হাতিতে চড়ে যুদ্ধ করত, পুরুরাজ হাতির পিঠে চড়ে আলেকজাণ্ডারের গ্রীক বাহিনীর বিপক্ষে দাড়িয়েছিল—তারা স্মার্ট ছিল না, স্মার্ট হল সিনেমার ছোকরা অ্যাক্টরের দল ? স্বশীল সেখান থেকে উঠে চলে এল। অবনীর ধরন-ধারণ তার ভাল লাগে নি—দূর সম্পর্কের মামাভাগ্নে, কোনকালের দৌহিত্র বংশের লোক, এই পৰ্য্যন্ত। এখন তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কী যোগ আছে ?—কিছুই না। জমিদারের ছেলেদের ওপর অবনীর এ কটাক্ষ, স্বশীলের মনে হল তাকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছে। তা করতে পারে—এরা এখন সব হঠাৎ-বড়লোকের দল, পুরনো বংশের ওপর ওদের রাগ থাকা অসম্ভব নয় । স্বশীল জমিদারপুত্রও বটে, নিষ্কৰ্ম্মাও বটে। বসে খেতে খেতে দিনকতক পরে পেটমোটা হয়েও উঠবে—এ বিষয়েও নিঃসন্দেহ। অবনী তাকে লক্ষ্য করেই বলেছে নিশ্চয়ই। বাড়ী এসে মুশীল জ্যাঠামশায়কে জিজ্ঞেস করলে—আচ্ছা জ্যাঠামণি, আমাদের বংশে কখনো কেউ চাকরি করেছে ? t জ্যাঠামশায় তারাকান্ত মুস্তফির বয়স সত্তরের কাছাকাছি। তিনি পুজোর দালানের সঙ্গের ছোট কুঠরিতে সারাদিন বৈষয়িক কাগজপত্র দেখেন এবং মাঝে মাঝে গীতা পাঠ করেন। ঘরটার কুলুঙ্গিতে ও দেওয়ালের গায়ের তাকে গত পঞ্চাশ বছরের পুরনো পাঞ্জি সাজানো। তারাকাস্ত বললেন—কেন বাবা স্বশীল ? এ বংশে কারো কোন ভাবনা ছিল যে চাকুরি করবে ? —ছেলেরা কী করত জ্যাঠামণি ? —পায়ের ওপরে পা দিয়ে বসে খেয়ে আমাদের পুরুষানুক্রমে চলে আসছে—তবে আজকাল বড় খারাপ সময় পড়েছে, জমিজমাও অনেক বেরিয়ে গেল—তাই যা-হয় একটু কষ্ট যাচ্ছে। কী আবার করবে কে ? ওতে আমাদের মান যায়। স্বশীল কথাটা ভেবে দেখলে অবসর সময়ে। অবনীর কথাগুলো হিংসেতে ভরা ছিল এখন
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৯০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।