পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭৮ বিভূতি-রচনাবলী দেখা যাচ্ছে । অবনীদের বাইরে বেরিয়ে চাকুরি না করলে চলে না—আর তাদের চিরকাল চলে আসছে বাড়ী বসে—এতে অবনীর হিংসের কথা বৈকি। মামার বাড়ী খেয়ে চিরকাল ওরা মানুষ । আজ হঠাৎ বড়লোক হয়ে চাল দেওয়া কথাবার্তায় সেই মাতুল বংশকেই ছোট করতে চায়। স্বশীল এর প্রমাণ অন্য একদিক থেকে খুব শিগগিরই পেলে। মুস্তফিদের সাবেক পূজোর মণ্ডপে দুর্গোৎসব টিমৃটিম করে সমাধা হল—লোকের পাতে ছেচড়া, কলাইয়ের ডাল, ক্ষেতের রাঙা নাগরা চালের ভাত, পুকুরের মাছ, জোলো দুধোলো দই ও চিনির তেল ঘোঙা মোগু খাইয়ে–কিন্তু অবনীদের বাড়ী যে কালীপূজো হল-—সে একটা দেখবার জিনিস ! কালীপূজোর রাত্রে গা-স্বদ্ধ পোলাও মাংস, কলকাতা থেকে আনা দুই রাবড়ি সন্দেশ খেলে। টিন-টিন দামী সিগারেট নিমন্ত্রিতদের মধ্যে বিলি হ’ল, পরদিন দুপুরে যাত্রা ও ভাসানের রাত্রে প্রতি সম্মেলনে প্রচুর জলযোগের ব্যবস্থা ছিল। অবনীর এক বন্ধু আবার ম্যাজিক লষ্ঠনের স্নাইড দেখিয়ে স্বাস্থ্য সম্বন্ধে এক বক্তৃতাও করলে। গ্রামের লোক সবাই ধন্য-ধন্য করতে লাগল। এ গায়ে এমনটি আর কখনো হয় নি—কেউ দেখেনি। সকলের মুখে অবনীর মুখ্যাতি । কিন্তু তাতে কোন ক্ষতি ছিল না, যদি তারা সেই সঙ্গে আমনি মুস্তফি জমিদারদের ছোট করে না দিত । —নাঃ, মুস্তফিরা কখনো এদের সঙ্গে দাড়ায় ? বলে কিসে আর কিসে ! —যা বলেছ ভায়া! নামে তালপুকুর, ঘটি ডোবে না – —শুধু লম্বা লম্বা কথা আছে – আর কিছু নেই রে ভাই। এ-ধরনের একটা কথা একদিন মুশীলের নিজের কানেই গেল। নিজেদের পুকুরের ঘাটে বলে স্বশীল ছিপে মাছ ধরছে, গায়ের ওর পরিচিত দুটি ভদ্রলোক কথা বলতে বলতে পথ দিয়ে যাচ্ছেন। একজন বললেন—মুস্তফিদের ওপর এবার খুব একহাত নিয়েছে অবনী । অপর জন বললে—তার মানে মুস্তফিদের আর কিছু নেই। সব ছেলেগুলো বাড়ী বসে বসে খাবে, আজকালকার দিনে কি আর সেকেলে বনেদি চাল চলে ? লেখাপড়া তো একটা ছেলেও ভাল করে শিখলে না— —লেখাপড়া শিখেও তো ঐ স্বশীলটা বাপের হোটেলে দিব্যি বসে থাচ্ছে-ওদের কখনো কিছু হবে না বলে দিলাম। যত সব আলসে আর কুঁড়ে। কথাটা মুশীলের মনে লাগল। এদিক থেকে সে কোনদিন নিজেকে বিচার করে দেখেনি। চিরকাল তো এইরকম হয়ে আসছে তাদের বংশে, এতদিন কেউ কিছু বলে নি, আজকাল বলে কেন তবে ? পাশের গ্রামে সুশীলের এক বন্ধু থাকত, স্বশীল তার সঙ্গে গিয়ে দেখা করলে। ছেলেটির নাম প্রমথ, তার বাবা এক সময়ে মুস্তফিদের স্টেটের নায়েব ছিলেন, কিন্তু তারপর চাকুরি ছেড়ে মাল-চালানি ব্যবসা করে অবস্থা ফিরিয়ে ফেলেছেন।