পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হীরামানিক জ্বলে ২৭৯ প্রমথ বেশ বুদ্ধিমান ও বলিষ্ঠ যুবক । সে নিজের চেষ্টায় গ্রামে একটা নৈশ স্কুল করেছে, একটা দরিদ্র-ভাণ্ডার খুলেছে—তার পেছনে গ্রামের তরুণদের যে দলটি গড়ে উঠেছে—গ্রামের মঙ্গলের জন্যে তারা না করতে পারে এমন কাজ নেই। সম্প্রতি প্রমথ বাবার আড়তে বেরুতে আরম্ভ করেছে। স্বশীল বললে—প্রমথ, আমাকে তোমাদের আড়তে কাজ শেখাবে ? প্রমথ আশ্চৰ্য্য হয়ে ওর দিকে চেয়ে বললে—কেন বল তো ? হঠাৎ এ কথা কেন তোমার মুখে ? —বসে বসে চিরকাল বাপের ভাত খাব ? —তোমাদের বংশে কেউ কখনো অন্ত কাজ করেনি, তাই বলছি। হঠাৎ এ মতিবুদ্ধি ঘটল কেন তোমার ? —সে বলব পরে । আপাতত একটা হিল্লে করে দাও তো ! —ওর মধ্যে কঠিন আর কি। যে দিন ইচ্ছে এসো, বাবার কাছে নিয়ে যাব। মাসখানেক ধরে স্বশীল ওদের আড়তে বেরুতে লাগল, কিন্তু ক্রমশ সে দেখলে, ভূষি মাল চালানির কাজের সঙ্গে তার অন্তরের যোগাযোগ নেই। তার বাবা ছেলেকে আড়তে যোগ দিতে বাধা দেন নি, বরং বলেছিলেন ব্যবসার কাজে যদি কিছু টাকা দরকার হয়, তাও তিনি দেবেন । একদিন তিনি জিজ্ঞেস করলেন—অাড়তের কাজ কি রকম হচ্ছে ? স্বশীল বললে—ও ভাল লাগে না, তার চেয়ে বরং ডাক্তারি পড়ি । —তোমার ইচ্ছে । তাহলে কলকাতায় গিয়ে দেখেশুনে এস । কলকাতায় এসে স্বশীল দেখলে, ডাক্তারি স্কুলে ভৰ্ত্তি হবার সময় এখন নয় । ওদের বছর আরম্ভ হয় জুলাই মাসে—তার এখনও তিন চার মাস দেরি। মুশীলের এক মামা খিদিরপুরে বাসা করে থাকতেন, তার বাসাতেই স্বশীল এসে উঠেছিল—তারই পরামর্শে সে দু-একটা আপিসে কাজের চেষ্টা করতে লাগল। দিন-পনরো অনেক আপিসে ঘোরাফেরা করেও সে কোথাও কোন কাজের স্ববিধে করতে পারলে না—এদিকে টাকা এল ফুরিয়ে । মামার বাসায় খাবার খরচ লাগত না অবিপ্তি, কিন্তু হাত খরচের জন্তে রোজ একটি টাকা দরকার। বাবার কাছে সে চাইবে না—নগদ টাকার সেখানে বড় টানাটানি, সে জানে। একটা কিছু না করে এবার বাড়ী ফিরবার ইচ্ছে নেই তার। অথচ করাই বা যায় কী ? সন্ধ্যার দিকে গড়ের মাঠে বসে রোজ ভাবে। স্বশীল সেদিন গড়ের মাঠের একটা নিজন জায়গায় বসে ছিল চুপ করে। বড় গরম পড়ে গিয়েছে—খিদিরপুরে তার মামার বাসাটিও ছোট-ছোট ছেলেমেয়েদের চিৎকায় ও উপত্ৰবে সদা সরগরম—সেখানে গিয়ে একটা ঘরে তিন-চারটি আট দশ বছরের মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে এক ঘরে রাত কাটাতে হবে। স্বশীলের ভাল লাগে না আদেী। তাদের অবস্থা এখন খারাপ হতে পারে, কিন্তু দেশের বাড়ীতে জায়গার কোন অভাব নেই।