পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮e বিভূতি-রচনাবলী ওপরে নিচে বড় বড় ঘর আছে—লম্বা লম্বা দালান, বারান্দা-পুকুরের ধারের দিকে বাইরের মহলে এত বড় একটা রোয়াক আছে যে, সেখানে অনায়াসে একটা যাত্রার আসর হতে পারে। .* এমন সব জ্যোৎস্না রাতে কতদিন সে পুকুরের ধারে ওই রোয়াকটায় একা বসে কাটিয়েছে। পুকুরের ওপারে নারিকেল গাছের সারি, তার পেছনে রাধাগোবিদের মন্দিরের চুড়োটা, সামনের দিকে ওর ঠাকুরদাদার আমলের পুরনো বৈঠকখানা। এ বৈঠকখানায় এখন আর কেউ বসে না-কাঠ ও বিচুলি, শুকনো তেঁতুল, ভূষি, খুটে ইত্যাদি রাখা হয় বর্ষাকালে। মাঝে-মাঝে সাপ বেরোয় এখানে । সেবার ভাদ্রমাসে তালনবমীর ব্রতের ব্রাহ্মণ ভোজন হচ্ছে পুজোর দালানে, হঠাৎ একটা চেচামেচি শোনা গেল পুকুর-পাড়ের পুরনো বৈঠকখানার দিক থেকে । সবাই ছুটে গিয়ে দেখে, হরি চাকর বৈঠকখানার মধ্যে ঢুকেছিল বিচালি পড়বার জন্যে— সে সময় কি সাপে তাকে কামড়েছে । হৈ-হৈ হল। লোকজন এসে সারা বৈঠকখানার মালামাল বার করে সাপের খোজ করতে লাগল। কিছু গেল না দেখা। হরি চাকর বললে সে সাপ দেখে নি, বিচুলির মধ্যে থেকে তাকে কামড়েছে । ওঝার জন্যে রানীনগরে খবর গেল । রানীনগরের সাপের ওঝা তিনটে জেলার মধ্যে বিখ্যাত—তারা এসে ঝাড়ফুক করে হরিকে সে-যাত্রা বাচালে। লোকজনে খুজে সাপও বের করলে—প্রকাও খয়ে-গোখরো। হরি যে বেঁচে গেল, তার পুনর্জন্ম বলতে হবে। —বাবু, ম্যাচস আছে—ম্যাচিস্ ? স্বশীল চমকে মাথা তুলে দেখলে, একটি কালোমত লোক। অন্ধকারে ভাল দেখা গেল না। নিম্নশ্রেণীর অশিক্ষিত অবাঙালী লোক বলেই সুশীলের ধারণ হল—কারণ তারাই সাধারণত দেশলাইকে ‘ম্যাচিস" বলে থাকে । স্বশীল ধুমপান করে না, স্বতরাং সে দেশলাইও রাখে না । সে কথা লোকটাকে বলতে সে চলেই যাচ্ছিল—কিন্তু খানিকট গিয়ে আবার অন্ধকারের মধ্যে যেন কি ভেবে ফিরে এল। সুশীলের একটু ভয় হল । লোকটিকে এবার সে ভাল করে দেখে নিয়েছে অস্পষ্ট অন্ধকারের মধ্যে। বেশ সবল, শক্ত-হাত-পা-ওয়ালা চেহারা—গুণ্ডা হওয়া বিচিত্র নয়। সুশীলের পকেটে বিশেষ কিছু নেই–টাকা-তিনেক মাত্র। স্বশীল একটু সতর্ক হয়ে সরে বসল। লোকটা ওর কাছে এসে বিনীত স্বরে বললে—বাবুজি, দু-আনা পয়সা হবে ? সুশীল বিনা বাক্যব্যয়ে একটা দুয়ানি পকেট থেকে বের করে লোকটার হাতে দিলে। তাই নিয়ে যদি খুশি হয়, হোক না । এখন ও চলে গেলে যে হয়! চলে যাওয়ার কোন লক্ষণ কিন্তু লোকটার মধ্যে দেখা গেল না। সে সুশীলের কাছেই এসে সরুতজ্ঞ সুরে বললে—বছং মেহেরবানি আপনার বাৰু! আমার আজ খাওয়ার কিছু ছিল না –এই পয়সা লিয়ে হটেলে গিয়ে রোটি খাবো। বাবুজির ঘর কুথায় ?