পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী واbچ —ও, বাবুজি, আপনি বহুৎ পড়ালিখা আদমি ! এই নাম কতকাল শুনিনি জানেন ? আজ দশ বারো বছর। শেষের নামটা—কী বললেন বাবুজি ? বোনিও ? ঠিক। স্থলু সী'র নাম জাহাজী চার্টে দেখবেন। স্থলু সী'র কাছাকাছি, এপার ওপার। কেন জানেন বাবুজি ? এই নাম শুনলে আমার বহুত কথা মনে পড়ে যায়। তাজব কথা! আজ দেখচেন আমায় এই গড়ের মাঠে বসে দু-একটা পয়সা ভিক্ষে করছি—কিন্তু আমি আজ-আচ্ছা, সে কথা এখন থাক । —তারপর কী করলে বল না । জঙ্গল থেকে এসে উঠলে আবার জাহাজে ? —হঁ্যা, উঠলাম। সেই কাপ্তান তখন মদ খেয়ে বেছ'শ হয়ে নিজের কেবিনে চাবি দিয়ে ঘুচ্ছে-আমি আগে তো ভাবলাম মরে গিয়েছে। মড়াগুলো কতক কাপ্তান ফেলে দিয়েছে —কতক তখনও রয়েচে । ভীষণ বদ গন্ধ –আর সেই গরম ! আমি জাহাজের কিছু খেতে পারিনে কলেরার ভয়ে । ডাঙায় গিয়ে মাছ ধরতাম—আর কচ্ছপ । —কাপ্তেন বেঁচে ছিল ? —বেঁচে ছিল, কিন্তু বেচারির মগজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল একেবারে । তখনকার দিনে বেতার ছিল না, আমাদের জাহাজে যে আমন হয়ে গেল, সে খবর কোথাও দেওয়া যায় নি। ওসব দিকের সমূদ্রে জাহাজ বেশি চলাচল করে না—জাহাঙের লাইন নয়। এগারো দিন পরে সৌরাবায়া থেকে জাহাজ যাচ্ছিল পাসারাপং,—তারা আমাদের আগুন দেখে এসে জাহাজে তুলে নিয়ে বাচায়। –কিসের আগুন ? ' —ডুবো পাহাড়ের খানিকটা ভাটার সময় বেরিয়ে থাকত। পাটের থলে জালিয়ে সেখানে রোজ আগুন করতাম—অন্য জাহাজের ধদি চোখে পড়ে। তাতেই তো থেকে গেলাম । এ পর্য্যন্ত শুনে স্বশীল বুঝতে পারলে না লোকটার ভাগ্য কিসে ফিরেছিল। তবে লোকট। যে মিথ্যা কথা বলছে না, ওর, কথার ধরন থেকে স্বশীলের তা মনে হল । কিন্তু এইবার লোকটা যে কাহিনী বললে, তা শেষ পর্য্যস্ত শুনে স্বশীল বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়ে গেল—অল্পক্ষণের জন্য সারা গড়ের মাঠ, এমন কি বিরাট কলকাতা শহরটাই যেন তার সমস্ত আলোর মালা নিয়ে তার চোখের সামনে থেকে গেল বেমালুম মুছে—বহু দূরের কোন বিপদসঙ্কুল নীল সমুদ্রে সে এক পাড়ি জমিয়েছে বহুকালের লুকোনো হীরে-মানিক-মুক্তোর সন্ধানে—পৃথিবীর কত পৰ্ব্বতে, কমারে, মরুতে, অরণ্যে অজানা স্বর্ণরাশি মাচুষের চোখের আড়ালে আত্মগোপন করে আছে—বেরিয়ে পড়তে হবে সেই লুকোনো রত্নভাণ্ডারের সন্ধানে—পুরুষ যদি হও! নয় তো আপিলের দোরে দোরে মেরুদণ্ডহীন প্রাণীদের মত ঘুরে ঘুরে সেলাম বাজিয়ে চাকুরির সজ্ঞান করে বেড়ানোই যার একমাত্র লক্ষ্য তার ভাগ্যে—নৈব চ, নৈব চ! এই খালাসটা হয়ত লেখাপড়া শেখে নি, হয়ত মাদিত নয়—কিন্তু এ সপ্ত সমূত্রে পাড়ি জমিয়ে এসেছে, নিয়া বড় বড় নগর বদর, বড় বড় দ্বীপ দেখতে কিছু বাকি