পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের পাহাড় ১৭ আলো সরে যাবে—সেই মুহূর্তে ওর আলো-আঁধারি কেটে যাবে এবং তখুনি সে করবে আক্রমণ | সে বুঝলে তার আয়ু মির্ভর করছে এখন দৃঢ় ও অবিকম্পিত হাতে টর্চটা সাপের চোখের দিকে ধরে থাকার ওপর। যতক্ষণ সে এরকম ধরে থাকতে পারবে ততক্ষণ সে নিরাপদ । কিন্তু যদি টর্চটা একটুও এদিক ওদিক সরে যায়—? শঙ্কর টর্চ ধরেই রইল। সাপের চোখ দুটো জলছে যেন দুটো আলোর দানার মত। কি ভীষণ শক্তি ও রাগ প্রকাশ পাচ্ছে চাবুকের মত খাড়া উদ্যত তার কালো মিশমিশে সরু শঙ্কর ভুলে গেল চারিপাশের সব আসবাব-পত্র, আফ্রিক। দেশটা, তার রেলের চাকরি, মোম্বাসা থেকে কিস্থমু লাইনট, তার দেশ, তার বাবা-মা—সমস্ত জগৎটা শূন্য হয়ে গিয়ে সামনের ওই দুটো জলজলে আলোর দানায় পরিণত হয়েছে তার বাইরে সব শূন্য। অন্ধকার। মৃত্যুর মত শূন্য, প্রলয়ের পরের বিশ্বের মত অন্ধকার। সত্য কেবল ওই মহাহিংস্র উদ্যত-ফণা সপ, যেটা প্রত্যেক ছোবলে ১৫০০ মিলিগ্রাম তীব্র বিষ ক্ষতস্থানে ঢুকিয়ে দিতে পারে এবং দেবার জন্যে ওৎ পেতে রয়েছে।“ শঙ্করের হাত ঝিম্‌ঝিম্ করছে, আঙ্গুল অবশ হয়ে আসছে, কনুই থেকে বগল পৰ্য্যস্ত হাতের যেন সাড়া নেই। কতক্ষণ সে আর টর্চ ধরে থাকবে ? আলোর দানা দুটো হয়তো সাপের চোখ নয়-জোনাকি পোকা কিংবা নক্ষত্র---কিংবা - টর্চের ব্যাটারির তেজ কমে আসছে না ? সাদা আলো যেন হলদে ও নিস্তেজ হয়ে আসছে না ? কিন্তু জোনাকি পোকা কিংবা নক্ষত্র দুটো তেমনি জলছে। রাত ন দিন ? ভোর হবে, না সন্ধ্যা হবে ? শঙ্কর নিজেকে সামলে নিলে। ওই চোখ দুটোর জালাময়ী দৃষ্টি তাকে যেন মোহগ্ৰস্ত করে তুলেছে। সে সুজাগ থাকবে। এ তেপাস্তরের মাঠে চেঁচালেও কেউ কোথাও নেই সে জানে— তার নিজের স্বায়ুমণ্ডলীর দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করছে তার জীবন। কিন্তু সে পারছে না যে, হাত যেন টন্‌টন করে অবশ হয়ে আসছে, আর কতক্ষণ সে টর্চ ধরে থাকবে ? সাপে না হয় ছোবল দিক্ কিন্তু হাতখানা একটু নামিয়ে নিলে সে আরাম বোধ করবে এখন। তার পরেই ঘড়িতে টং টং করে তিনটে বাজলো। ঠিক রাত তিনটে পৰ্য্যন্তই বোধ হয় শঙ্করের আয়ু ছিল, কারণ তিনটে বাজবার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত কেঁপে উঠে নড়ে গেল— সামনের আলোর দানা গেল নিভে। কিন্তু সাপ কৈ ? তাড়া করে এল না কেন? পরক্ষণেই শঙ্কর বুঝতে পারলে সাপটাও সাময়িক মোহগ্ৰস্ত হয়েছে তার মত। এই অবসর - বিদ্যুতের চেয়েও বেগে সে টেবিল থেকে এক লাফ মেরে অন্ধকারের মধ্যে দরজার আগল খুলে ফেলে ঘরের বাইরে গিয়ে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলে। “ সকালের ট্রেন এল। শঙ্কর বাকী রাতটা প্ল্যাট্রফৰ্ম্মেই কাটিয়েছে। ট্রেনের গার্ডকে বললে সব ব্যাপার। গার্ড বললে—চলে দেখি স্টেশন ঘরের মধ্যে। ঘরের মধ্যে কোথাও