বিভূতি-রচনাবলী مراج ও রোগীর বিছানার পাশে বসল। সেষ্ট অপরিচিত মূস্যু স্বদেশবাসীকে দেখে ওর মনে একটা গভীর অল্পকম্প ও মমতা জেগে উঠল—যেন সত্যিই কতকালের আপনার জন । রোগী বললে—আমার নাম নটরাজন, ত্রিবেভ্রাম শহর থেকে এগারো মাইল দূরে কেটিউল্পী বলে ছোট একটি গ্রামে আমার বাড়ী। কোচিন থেকে ষে স্টীমলঞ্চ ছাডে ত্রিবেঞ্জাম বাবার জন্তে, সে স্টীমার আমার গ্রামের ঘাট ছুয়ে যায়। বেউয়া কাঞ্জিয়াম নদীর ধারে, চারিধারে ঘন বন আর ছোট ছোট পাহাড়—কেটউল্প গ্রাম তুমি দেখ নি, বুঝতে পারবে না সে কী চমৎকার জায়গা ! আমি অনেক দেশ বেড়িয়েছি পৃথিবীর, ভবঘুরে হয়ে চিরদিন কাটিয়ে দিলাম জীবনটা—কিন্তু আমি তোমায় বলছি শোন, ভারতবর্ষের মধ্যে তো বটেই, এমন কি পৃথিবীর মধ্যে ত্রিবান্ধুর একটি অদ্ভুত স্বন্দর দেশ। কিন্তু আমার দেশের বর্ণনা শোনাবার জন্তে আজ তোমায় আমি ডাকি নি। আমার দিন শেষ হয়ে এসেছে, কাল ৰে স্বর্বাবে উঠবে আকাশে, তা আমি চোখে বোধ হয় দেখতে পাব ন—তুমি আমার দেশবাসী ভাই, একটা উপকার করবে আমার ? —কি বলুন ? আপনি আমার চাচার বয়সী, কী হুকুম করবেন বলুন। সম্ভব হলে নিশ্চয়ই করব। রোগীর পাণ্ডুর মুখ অল্পক্ষণের জন্তে আনন্দে উজ্জল হয়ে উঠল—নিবু-নিবু প্রদীপের শিখার মত। ওর দিকে গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে বললে—কথা দিলে ? কিন্তু ভীষণ লোভ দমন করতে হবে ভাই ! —আল্লার নামে বলছি, যা করতে বলবেন, তাই করব । —আমার মাথার বালিশের তলায় একটা চামড়ার ব্যাগ আছে, সেটা বার করে নাও । আমার মৃত্যুর পরে বাগটা আমার গ্রামে আমার স্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবে। ও রোগীর মাথাটা সন্তপণে একধারে সরিয়ে আস্তে আস্তে একটা ছোট চামড়ার ব্যাগ বার করলে। ব্যাগের মধ্যে কতকগুলো কাগজপত্র ছাড়া আর কিছু আছে বলে মনে হল না ওর । বৃদ্ধ নটরাজন বললে—তোমার কাছে আমি কোন কথা লুকোব না। ব্যাগটার মধ্যে একখানা ম্যাপ আছে—জীবনে অনেক সাহসের কাজ করেছি, অনেক বনে জঙ্গলে ঘুরেছি— অনেক রকম লোকের সঙ্গে মিশেছি। এই ম্যাপখানা এবং ব্যাগের মধ্যে যা যা আছে—তা আমি সৎপথে থেকে হস্তগত করি নি। সংক্ষেপে কথাটা বলে নি, কারণ বেশি বলবার আমার সময় বা শক্তি নেই। আজ বিশ বাইশ বছর আগে এই ব্যাগ আমার হস্তগত হয়। ষে ম্যাপখান এই ব্যাগের মধ্যে আছে—তার সাহায্যে যে-কোন লোক জুনিয়ায় মহা ধনী লোক হয়ে যেতে পারে। স্থলু দীর একটা খাড়ির ধারে নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে প্রাচীন আমলের এক নগরের ভগ্নস্তৃপ আছে । সেই নগর প্রাচীন যুগের এক হিন্দু রাজ্যের রাজধানী ছিল। তার এক জায়গায় প্রচুর ধনরত্ন লুকোনো আছে। যার কাছ থেকে এ ম্যাপ আমি পাই, সে আমারই বন্ধু, দু-জনে মিলে স্বলু সমুদ্রে বোম্বেটেগিরি করেছি দশ বছর ধরে। সে জাতিতে মালয়, ম্যাপ তার তৈরি—সে নিজে ওই শহরের সন্ধান খুজে বার করেছিল। সেখানে
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩০১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।