९*२ বিভূতি-রচনাবলী —ওই যে নটরাজন বলেছিল এই খোদাই-করা আঁকজোকের মধ্যে আসল মালের হদিস পাওয়া যাবে—সেই লোভেই একে হাতছাড়া করে ফেলি নি । —নটরাজনের স্ত্রী কোথায় ? —তাকে কেটিউশ্লাগায়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। মাসে মাসে টাকা পাঠাই। শহরে খরচ বেশি, গায়ে খরচ কম। ঘর ভাড়া লাগে না। সেই সেদিনও পাঁচ টাকা ডাকে পাঠিয়েছি। এখন চাকরি নেই—নিজের পেটই চলে না। —কাগজপত্র আর ম্যাপগুলো ? —ওই নটরাজনের স্ত্রী—তাকে আমি মা বলি—সেখানে তার কাছেই আছে। সঙ্গে নিয়ে বেড়াইনে, বড্ড দামী ও দরকারী জিনিস—আমার কাছে থাকলে হারিয়ে যেতে পারে। সে বুড়ি তার বেতের পেটরায় তুলে রেখে দিয়েছে, যখন দরকার হবে, নিয়ে আসব গিয়ে । —এসব আজ কত বছরের কথা হল ? —বেশি দিনের নয়। আজ দু-বছর আগে আমি নটরাজনের গায়ে গিয়ে বুড়ীর সঙ্গে প্রথম দেখা করি। —তোমাকে একটা পরামর্শ দিই শোন । এই মানিকখানা বিক্রী করে ফেলে টাকাটা নটরাজনের স্ত্রীকে দাওগে । তার জীবনটা একটু ভালভাবে কাটবে। দেড় হাজার টাকা হাতে পেলে সে খুব খুশি হবে। তাদেরই জিনিস ধৰ্ম্মত দেখতে গেলে, তোমার নিজের কাছে রখা মানে চুরি করা। —কিন্তু বাৰু, তাহলে হদিস চলে গেল যে। —ম্বাবে না। প্যারিস প্লাস্টারের ছাচে ওটা তুলে নিলেই চলে। ওই ছবিটার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক। মানিকখানা যার জিনিস, তাকে দাও ফিরিয়ে । তুমি যখন মা বলে ডাকে, তখন তার আশীৰ্ব্বাদ তোমার বড় দরকার। মানিকখানা যদি বুড়ী বিক্রি করে, যে কিনবে সে ওর খোদাই ছবির কোন মানে করতে পারবে না, তার কোন কাজেই লাগবে না। —বেশ বাবুজি, আপনিই কাজটা করিয়ে দিন না! - —কাল এটা সঙ্গে করে নিয়ে আমার সঙ্গে এখানে দেখা কোরো। আমার একটা জানাগুনে লোক আছে সে এইসব কাজ করে—তাকে দিয়ে করিয়ে দেব। রাত হয়ে গিয়েছিল। স্বশীল মাঠ থেকে ফিরতে ফিরতে কত কথাই ভাবলে। তার মাথার মধ্যে যেন কেমন করছে। এ যেন আরব্য উপন্যাসের কাহিনীর মত অদ্ভূত ! এমনভাবে গড়ের মাঠে বেড়াতে বেড়াতে একজন মুসলমান লস্করের সঙ্গে দেখা হবে—সে তাকে এমন একটি আজগুবি গল্প বলে যাবে- এ কখনো সে ভেবেছিল ? গল্পটা আগাগোড়া গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দিতেও পারত সে, যদি ওই চুনির সীলমোহরখানা সে না দেখত নিজের চোখে । লোকটার গল্প ষে সত্যি, তা ঐ পাথরখানা থেকে বোঝা যাচ্ছে। সন তারিখ ও জায়গা
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩০৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।