ইৗরামানিক জ্বলে సిసి(t কোথায় সে পড়ে আছে পাড়াগায়ে, পুরোনো জমিদার-ঘরের বিলাসপুষ্ট আয়েলী ছেলেটি সেজে—তাদেরই পূৰ্ব্বপুরুষ একদিন ষে অলি হাতে সপ্ত সমুদ্রে পাড়ি জমিয়েছিল—তাদেরই স্বজাতি, স্বদেশবাণী—আর সে থাকবে দিব্যি আরামে তাকিয়া ঠেস দিয়ে শুয়ে ; তেলে জলে, দাদখানি চালের ভাত আর মাছের ঝোলে, কোনরকমে পৈতৃক বাঙালী প্রাণটুকু বজায় রেখে চলবে টায় টায় ! চিরকাল হয়ত এমনি কেটে যাবে তার । প্রজা ঠেঙিয়ে খাজনা আদায় করে, পুরোনো চণ্ডীমণ্ডপে বসে তামাক টেনে আর পালপাৰ্ব্বণে গ্রাম্য লোকজনের পাতে দই মোও দিয়ে হাততালি অর্জন করবার প্রাণপণ চেষ্টায় মশগুল হয়ে । তার পর আছে মামলা মোকদ্দমার তদারক করতে কোর্টে ছুটোছুটি—ডিক্রি, নালিশ, কিস্তাবন্দী, সইমোহরের নকল, সমন জারি—উঃ ! ভাবলে তার গা কেমন করে। প্রাচীন ধনী বংশের লাল খেরো-বাধানে রোকড় ও খতিয়ানের চাপে সে নিজের ধোঁবন ও জীবনকে একদম পিষে মেরে ফেলে শেষের দিকে যখন মহকুমার হাসপাতালে একটি মাত্র রোগী থাকবার স্থানের টাকা জেলাবোর্ডের হাতে দেবে স্বৰ্গীয় পিতৃদেবের স্মৃতি-রক্ষা কল্পে-তখন হয়ত সে পাবে রায়সাহেব বা রায়বাহাদুর খেতাব । আর সঙ্গে সঙ্গে ভাববে, এই তো জীবনের পরম সার্থকতা সে পেয়ে গেছে। না দেখবে দুনিয়া—না দেখবে জীবন, লিপরা বলদের মত ঘানিগাছের চারিধারে ঘুরেই জীবন কাটাবে। রাত্রে সে সনৎকে ডেকে বললে সনৎ, তোর সাহস আছে ? —কেন দাদা ? —আমি যদি বিদেশে বেরুই, আমার সঙ্গে ধাবি ? —এখুনি—ঘদি নিয়ে যাও! —অনেক দূর হলেও ? —যেখানে বল । —বাড়ীর জন্য মন কেমন করবে না ? —আমি পুরুষ মানুষ না দাদা ? ও কথাই ওঠে না! —আমি এমনি জিগ্যেস করছি— পরদিন সে ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিতে বসে পড়লপুরোনো দিনের বৃহত্তর ভারতের ইতিহাস। যে সব কথা সে জানত না, কোনদিন শোনে নি—ডা: বম্বর কথায় তার ইচ্ছে গেল সেগুলো জানবার ও পড়বার । বিজয়সিংহের সিংহল বিজয়ের কাহিনী, চম্পা রাজ্যের কথা—ম্বদূর সন্ধুত্রপারের ভারতীয় উপনিবেশ চম্প। ভারতবাসী অসির তীক্ষাগ্রভাগ দিয়ে যে দেশের মাটি-পাথরের গায়ে নাগরাজ বাম্বকী, শিব-পাৰ্ব্বতী ও বিষ্ণুমূৰ্ত্তি অমর করে রেখেছে।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩০৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।