পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৬ বিভূতি-রচনাবলী জামাতুল্লা খালালীকে সে একশোবার ধন্যবাদ জানালো ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিতে বসে পড়তে পড়তে । সে তো এক পাড়াগায়ে অলস জীবন যাপন করছিল— কোনদিন এসব কথা সে জানতেও পারত না-এত বড় ছবি তার মনে কোনদিন জাগতও না—যদি দৈবক্রমে জামাতুল্লা খালাসী সেদিন তার পাশে এসে বসে দেশলাই না চাইত । তুচ্ছ এক পয়সার দেশলাই । পড়ার টেবিলে বসে বসেই সুশীলের হাসি পেল কথাটা ভেবে। ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি থেকে বার হয়েই জামাতুল্লা খালাসীর সঙ্গে দেখা করতে গেল। মাঠের মধ্যে নিদিষ্ট জায়গাটিতে বসে আছে । সুশীলকে দেখে সে বললে—আস্থন বাবু, কাল রাতে এক কাও হয়ে গেছে !—আপনার সঙ্গে দেখা করব বলে— স্বশীল বাধা দিয়ে বললে—কী—কী ? জামাতুল্লা বললে—সে এক আজগুবি কাও বাবু— —কী রকম ব্যাপার ? இ. —আপনার সেই বন্ধুর বাড়ী থেকে পাথরখানা নিয়ে কাল ফিরছি বাবু, মেটেবুক্লজের কাছে ছোটমোল্লাখালি বলে ষে বস্তি—ওই বস্তির কাছে আমার এক দোস্ত থাকে । ভাবলাম, চা খেয়ে ঘাই । সেখানে একেবারে মানুষ নেই—ফাক মাঠ, সিকিমাইল দূরে ছোটমোল্লাখালি বস্তি । হঠাৎ বাবু আমার মনে হল আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, কে যেন আমার গলা ছু হাত দিয়ে চেপে ধরে আমায় মেরে ফেলবার চেষ্টা করছে—আমি তো চেচিয়ে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেলাম—কিন্তু পড়ে গেলাম চিৎপাত হয়ে মাঠের মধ্যে- পেছনে সে সময় পায়ের শব্দ শুনলাম যেন— স্বশীল ব্যস্ত হয়ে বললে –পাথরখানা আছে তো ? —শুনুন বাবু, তারপর । আমি এমন কাও কখনো দেখিনি। চিৎপাত হয়ে পড়ে আর জ্ঞান নেই। যখন জ্ঞান হল তখন দেখি আমার চারিপাশে দু-তিন জন লোক দাড়িয়ে, তারা কেউ পানি এনে আমার চোখে মুখে দিচ্ছে, কেউ গামছা নেড়ে বাতাস করছে। আমার দোস্তর নাম বলতে তারা আমায় ছোটমোল্লাখালি নিয়ে গেল তার বাড়ীতে। সেখানে গিয়ে যখন আমার ইশ বেশ ভাল ফিরে এল, আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখি পাথরখানা নেই। —বল কী ? নেই! গেল সেখান ! —শুমুন বাবু আজগুবি কাও ! পাথর নেই দেখে তো আমি আবার অজ্ঞান হয়ে গেলাম। দোস্তর বাড়ী তো শোরগোর পড়ে গেল। কত লোক দেখতে এল—আমার দোস্ত কতবার মুখে চোখে পানি দিয়ে ডাক্তার ডেকে আমায় চাঙ্গা করলে। আমি সেই রাত্রেই বাড়ী চলে গেলাম= - —তারপর ?