২৯৮ বিভূতি-রচনাবলী আডডা। রাত্রে সে পথে গেলে বিপদ আছে। তোমার যত সাহসই থাকুক-রাত্রে যাওয়া হবে না । সুশীলের এ সতর্কতার জন্তে জামাতুল্লাকে চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকতে হয়েছিল। রাত্রে আহারাদির পরে স্বশীল জামাতুল্লাকে বললে—আমার মতলব তোমাকে বলব বলেই তোমায় ডেকেছি। আমার মনে হয়েছে আমরা—যে করেই হোক-—চল সেই বনের মধ্যে প্রাচীন নগরের সন্ধানে বেরুই। টাকাকড়ির সন্ধান আমি করছি নে—পাই ভালো, তা আমি একা নেব না—নটরাজনের স্ত্রীর শেষ দিনগুলো যাতে সুখে-স্বচ্ছন্দে কাটে তার ব্যবস্থা করব তা দিয়ে। তারপরে তুমি আছ, আমি আছি । ভগবানের আশীৰ্ব্বাদে আমার ঘরে খাবার ভাবনা নেই । জামাতুল্লা খালালী ঘাড় নেড়ে বললে—সে আমি আগেই জানি বাবু—আপনি রহস্ আদমি—মানুষ দেখেই চিনতে পারি। নইলে আপনাকে এত বিশ্বাস করতাম না। বড় ঘরানা আপনারা, আপনাদের নজর হবে বড় | —তা ছাড়া কী জানো জামাতুল্লা ? এই বয়স হচ্ছে বিদেশ বেড়ানোর সময়। চিরকাল বাড়ী বসে থাকব যদি, তবে দুনিয়া দেখব কবে ? •••তোমার সাহস আছে আমায় সেখানে নিয়ে যাবার তো ? —এ বাবুজি সাহসের কথা নয়। জাহাজ চালানো বিদ্যের কথা—কৌশলের কথা । সিঙ্গাপুরে আমার এক দোস্ত আছে তাকে খুজে বার করতে হবে। সে স্কুলু সাঁতে জাহাজ চালিয়েছে অনেক দিন—আপনার কাছে ছিপাবে না, বোম্বেটের কাজ করত সে। এখন বড় কড়া শাসন, ওলন্দাজ সরকার আর আমাদের ইংরেজ সরকারের । মানোয়ারী জাহাজ সৰ্ব্বদা ঘুরছে। বোম্বেটে জাহাজ ধরতে পারলেই ধরে নিয়ে আসবে—আর গুলি করবে। সেজন্তে সে কাজ ছেড়ে দিয়ে দোকান করে বসে আছে সিঙ্গাপুরে। তাকে সঙ্গে নিতে হবে । —তাহলে কী রকম ব্যবস্থা করবে যাবার ? —আপনি টাকা কত নিতে পারবেন বলুন । —শ-পাচেক । তার বেশি এক পয়সা নয় । —তাও নেবেন না। আপনি আমার দোস্ত—দুশো নিয়ে চলুন। আমি পাথর বিক্রি করে ফেলি—সেই টাকায় চালাবো । —সে টাকা তোমায় আমি নিতে দেব না জামাতুল্লা। নটরাজনের স্ত্রীকে বঞ্চিত করে সে পাথর নিয়ে আমাদের ফল ভাল হবে না। নটরাজন স্বৰ্গ থেকে দেখবে আর অভিশাপ দেবে। --এইজন্তেই তো বলি, রুইস্ আদমির বুদ্ধি আর আমাদের বুদ্ধি ! আপনি যা বলবেন বাবুজি । অনেক রাত হয়েছিল। জামাতুল্লার বিশ্রামের বন্দোবস্ত করে দিয়ে স্বশীল নিজে শোবার
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।