পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হীরামানিক জ্বলে W)e@ —আমি আমার খরিদ্ধারকে বিপদে ফেলতে চাইনে। শোন মিস্টার, আমি জানি ও ছুরি তুমি কেন নিতে চাইছ। ওই জাক-জোকগুলোর জন্তে-ঠিক কি না ? প্রাচীন কাল থেকে এ দেশে অনেকে জানে ওই অঁাকগুলো কোথাকার এক গুপ্ত নগর আর তার ধনভাণ্ডারের হদিস। সকলে জানে না বটে, তবে পুরোনো লোক কেউ কেউ জানে। অনেক পুরোনো জেড়, পাথরের আংটিতে ওই আঁক-জোক আমি দেখেছি। ও নিয়ে একটা গুপ্ত সম্প্রদায় আছে । সম্প্রদায়ের বাইরে আর কারো কাছে এই অঁাক-জোকওয়ালা আংটি কি ছুরি কি কিরীচ দেখলে তারা তার পেছনে লেগে গুপ্তহত্য পৰ্য্যন্ত করে ফেলে—তবে তাদের আসল উদ্দেশু থাকে, জিনিসটাকে হস্তগত করা। —কেন ? 龜 —পাছে অন্য কেউ ওই অঁাক-জোকের হদিস পেয়ে সেই প্রাচীন নগর আর তার গুপ্ত ধনভাণ্ডার আবিষ্কার করে ফেলে। ওরা নিজেরা যখন বের করতে পারলে না—তখন আর কাউকে ওরা খোজ করতেও দেবে না। ও চিহ্নের জিনিস কাছে রাখা মানে প্রাণ হাতে করে বেড়ানো । কিন্তু আমার মনে হয় কী জান, মিস্টার ? ওরকম নগর কোথাও নেই। ও একটা মিথ্যা প্রবাদের মত এ অঞ্চলে প্রচলিত আছে। কেউ দেখেছে এ পর্য্যস্ত বলতে পার ? কেউ বলতে পারে সে দেখেছে ? কেউ সন্ধান দিতে পারে ? ও একটা ভুয়ো গল্প। চা খেয়ে বাইরে এসে তিনজনে সমুদ্রের দিকে চলল। চীনেম্যানটি পিছন থেকে ডেকে বললে—ওদিকে যেও না মিস্টার, সামরিক সীমান— যাওয়া নিষেধ। সমূদ্রের ধারে এদিকে বসবার জায়গা নেই । একটু নির্জন স্থানে গিয়ে স্বশীল বলাল—জামাতুল্লা, শুনলে সব কথা ? এখনো কি তোমার মনে হয় সে নগর আছে কোথাও ? আমরা আলেয়ার পেছনে ছুটছি নে ? নটরাজনের গল্প ভুয়ো নয় ? জামাতুয় বললে—তবে পরাগ মণি এল কোথা থেকে { —আমি তোমায় বলছি নটরাজনের কাহিনী আগাগোড়া বানানো গল্প। পদ্মরাগ মণিখান সে কোনপ্রকার অসৎ উপায়ে হস্তগত করে—ষার উপরে প্রাচীন ও প্রচলিত প্রথানুযায়ী ঐ চিহ্নটি অঁাকা ছিল । এ ছাড়া ওর কোন মানে নেই। জামাতুল্লার মুখচোখের ভাব হঠাৎ যেন বদলে গেল—কত বৎসর পূর্কের এক স্বপ্রভর দিন, এক আতঙ্কম্ভর কৃষ্ণ-রজনীর স্মৃতি তার মুখের রেখায়, চোখের দৃষ্টিতে। সে বললে—কিন্তু বাবুজি, নটরাজন হয়ত দেখেনি, আমি তা দেখেছি। ভীষণ বনের মধ্যে অন্ধকার রাত কাটিয়েছি। আমি কারো কথা শুনিনে। —খুব সাবধান জামাতুল্লা, আমাদের প্রাণের দাম এক কানা-কড়িও না—যদি একথা কোন রকমে প্রকাশ হয় যে আমরা ওই অঁাক-জোক-পড়া পাথরের ছাচে বার নিশানা সেই নগর খুজতে বেরিয়েছি ।