চাদের পাহাড় Sసె গ্রীষ্মকাল ক্রমেই প্রখর হয়ে উঠল। আফ্রিকার দারুণ গ্রীষ্ম—বেলা ন’টার পর থেকে আর রৌদ্রে যাওয়া যায় না। এগারোটার পর থেকে শঙ্করের মনে হয় যেন দিকবিদিক দাউ দাউ করে জলছে। তবুও সে ট্রেনের লোকের মুখে শুনলে মধ্য আফ্রিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকার গরমের কাছে এ নাকি কিছুই নয়। শীঘ্রই এমন একটা ঘটনা ঘটল যা থেকে শঙ্করের জীবনের গতি মোড় ঘুরে অন্য পথে চলে গেল। একদিন সকালের দিকে শঙ্কর মাছ ধরতে গিয়েছিল । যখন ফিরছে তখন বেলা তিনটে। স্টেশন যখন আর মাইলটাকৃ আছে, তখন শঙ্করের কানে গেল সেই রৌদ্রদগ্ধ প্রাস্তরের মধ্যে কে যেন কোথায় অস্ফুট আৰ্ত্তম্বরে কি বলছে। কোন দিক থেকে স্বরট। আসছে, লক্ষ্য করে কিছুদূর যেতেই দেখলে একটা ইউকা গাছের নীচে স্বল্পমাত্র ছায়াটুকুতে কে একজন বসে আছে । শঙ্কর ক্রতপদে তার নিকটে গেল । লোকটা ইউরোপীয়ান – পরনে তালি দেওয়া ছিন্ন ও মলিন কোটপ্যান্ট। একমূখ লাল দাড়ি, বড় বড় চোখ, মুখের গড়ন বেশ স্বত্র, দেহও বেশ বলিষ্ঠ ছিল বোঝা যায়, কিন্তু সম্ভবতঃ রোগে, কষ্টে ও অনাহারে বর্তমানে শীর্ণ। লোকট। গাছের গুড়ি হেলান দিয়ে অবসন্ন ভাবে পড়ে আছে । তার মাথার মলিন সোলার টুপিট। একদিকে গড়িয়ে পড়েছে মাথা থেকে—পাশে একটা খাকি কাপড়ের বড় ঝোলা । শঙ্কর ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলে—তুমি কোথা থেকে আসছে ? লোকটা কথার উত্তর না দিয়ে মুখের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে জলপানের ভঙ্গি করে বললে --७कों खल । खल ! শঙ্কর বললে—এখানে তো জল নেই। আমার ওপর ভর দিয়ে স্টেশন পর্য্যস্ত আসতে পারবে ? অতি কষ্টে খানিকট ভর দিয়ে এবং শেষের দিকে এক রকম শঙ্করের কাধে চেপে লোকট। প্ল্যাটফর্মে পৌছুলো। ওকে আনতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল ; বিকেলের ট্রেন ওর অনুপস্থিতিতেই চলে গিয়েছে। ও লোকটাকে স্টেশন ঘরে বিছানা পেতে শোয়ালে, জল খাইয়ে সুস্থ করলে, কিছু খাদ্যও এনে দিলে। সে খানিকট চাঙ্গা হয়ে উঠল বটে, কিন্তু শঙ্কর দেখলে লোকটার ভারী জর হয়েছে। অনেক দিনের অনিয়মে, পরিশ্রমে, অনাহারে তার শরীর একেবারে ভেঙে গিয়েছে—দু-চার দিনে সে স্বস্থ হবে না । লোকটা একটু পরে পরিচয় দিলে। তার নাম ডিয়েগে। আল্ভারেজ—জাতে পটুগীজ, তবে আফ্রিকার সূৰ্য্য তার বর্ণ তামাটে করে দিয়েছে। রাত্রে ওকে স্টেশনে রাখলে শঙ্কর । কিন্তু ওর অস্থখ দেখে সে পড়ে গেল বিপদে - এখানে ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই—সকালের ট্রেন মোম্বাসীর দিকে যায় না, বিকেলের টেনে গার্ড রোগীকে তুলে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু রাত কাটতে এখনো অনেক দেরি। বিকেলের গাড়ীখান স্টেশনে এসে যদি পাওয়া যেত, তবে তো কোনো কথাই ळ्ळिल न! । বি. র. ৯—২
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।