পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী אלס এসব তুফানসঙ্কুল সমূত্রে পাড়ি দিতে চীনা জাঙ্ক-এর মত জিনিস নেই। জাহাজ ছেড়ে অনেক দূর এল, ক্রমে চারিধারে শুধু সমুদ্রের নীল জলরাশি। জামাতুল্লা নাবিক ও কর্ণধার—কিন্তু যে বৃদ্ধ চীনামান জান্ধের সারেং সেও দেখা গেল বেশ জাহাজ চালাতে জানে। দুদিন জাহাজ চলবার পরে জামাতুল্লার সঙ্গে চীনা সারেং-এর ঝগড়া বেধে গেল। ইয়ার হোসেন বললে—ৰ্চেচামেচি কেন ? কী হয়েছে ? চীনা সারেং বললে—জামাতুল্লা সাহেব জাহাজ চালাতে জানে না—কোথায় নিয়ে যাচ্ছে— জামাতুল্লা বললে—বিশ্বাস করবেন না ওর কথা! ও লোকটা একেবারে বাজে। ইয়ার হোসেন ও স্বশীল পরামর্শ করে জামাতুল্লার ওপরই কিন্তু জাহাজচালানোর ভাং দিলে। একদিন সন্ধ্যার সময় দূরে ডাঙা ও আলোর সারি দেখা গেল । চীনা সারেং ছুটে গিয়ে বললে—ওহে, বড় যে জাহাজ চালাচ্ছ—ও ভাঙা আর আলো কোথাকার ? এদিকে এত বড় ডাঙা কিসের ? জামাতুল্লাও একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল। চার্ট অনুসারে ওখানে আলো আর ডাঙা দেখবার কথা নয়। চীনা সারেং ইয়ার হোসেনকে আর স্বশীলকে ডেকে বললে—ওকে বলতে বলুন স্তর, ও আলো আর ডাঙা কিসের ? জামাতুল্লাকে মাথা চুলকোতে দেখে চীনা সারেং বিজয়গৰ্ব্বে বললে—আমি বলে দিচ্ছি স্তর—সাণ্ড প্রণালীর মুখে পিয়েরপং বন্দরের আলো—তার মানে বুঝেছেন ? আমরা আমাদের যাবার রাস্তা থেকে একশো মাইল পূৰ্ব্ব-দক্ষিণে হঠে এসেছি—এই রকম করে জাহাজ চালালে দক্ষিণ মেরুতে পৌছতে আমাদের আর বেশি দেরি থাকবে না স্তর ! চীনা সারেং সেদিন থেকে হল কাপ্তেন । স্বশীল বললে—রাগ কোরো না জামাতুল্লা । তুমি অনেকদিন এ কাজ করে নি, ভুলে গিয়েছ হে । জামাতুঙ্গা বললে—ত নয় বাবুজি। আমি ভুলি নি জাহাজ চালানো। আমার চার্ট ঠিক ছিল, আমার মনে হয় কি গোলমাল হয়েছে বা চার্টে ভুল করে রেখেছে। আরো তিনদিন পরে বিকেলের দিকে চীনা কাপ্তেন বললে—পারা নামছে স্তর, দড়িম্বড়া সামলে আর জিনিস সামলে আপনারা খোলের মধ্যে নেমে যান—ঝড় উঠবে। তিন ঘণ্টার মধ্যে ভীষণ ঝড় এল পূর্ব-দক্ষিণ কোণ থেকে। দড়িম্বড়া ছিড়ে পাল উড়িয়ে নিয়ে যায়—জামাতুল্লা চিৎকার করে বললে—সব খোলের মধ্যে যান—ভয়ঙ্কর ঢেউ উঠেছে— জাঙ্কের ডেকের ওপর বড় বড় ঢেউ সবেগে আছড়ে পড়ে—ক্ষুদ্র দেড় টনের জাঙ্ক খান যে কোন মুহূর্তে ভেঙেচুৱে সমূত্রের তলায় ডুবিয়ে দেবে মনে হল সবারই—কিন্তু দু-তিন বার জান্ধখান ভুবতে ডুবতে বেঁচে গেল—নাকানি-চুবুনি খেয়েও আবার সমুদ্রের ওপর ঠেলে ওঠে। সাবাস মোচার খোলা ।