পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১৮ বিভূতি-রচনাবলী দৈবক্রমে সেদিন গড়ের মাঠে জামাতুল্লা খালালী তার কাছে ‘ম্যাচিল চাইতে না আসত। কত সামান্ত ঘটনা থেকে যে জীবনের কত বৃহৎ ও গুরুতর পরিবর্তন শুরু হয় ! স্বশীল ও সনৎ দ্বীপের সৌন্দর্ঘ্যে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ ধরনের ঘন বনানী এ পর্য্যন্ত তারা কোথাও দেখে নি—রীতিমত ট্রপিক্যাল অরণ্য যাকে বলে, তা এতদিন স্বশীল ছবিতেই দেখে এসেছে এবং ইংরেজি ভ্রমণের বইয়ে তার বর্ণনাই পড়ে এসেছে—এতকাল পরে তা সে দেখল। জলের ধার থেকেই অপরিচিত গাছপালার নিবিড় বন আরম্ভ হয়েছে—বনস্পতি-মাতার বড় বড় গাছের গায়ে অর্কিন্ডের ফুলগুলি স্বগন্ধে প্রভাতের বাতাস মাতিয়েছে—মোটা মোট লতা দুলছে এ গাছ থেকে ও গাছে। কত রঙের প্রজাপতি উড়ছে—সামনে স্বনীল সমূদ্র প্রস্তুরাকীর্ণ তীরভূমিতে এসে সজোরে ধাক্কা মারছে, একেবারে খোল জলরাশি থৈ-থৈ করছে দক্ষিণ মেরু পর্ষ্যস্ত, একটা ব্রেকওয়াটার পর্ধ্যস্ত নেই কোথাও—যদি কেউ জলে পড়ে, তবে হাঙরের আহাৰ্য্য হবে এ জানা কথা—এসব সমুদ্রে হাঙরের উপদ্রব অত্যন্ত বেশি, স্বশীল আগেই শুনেছে । বনের মধ্যে অনেক জায়গায় এখনও অন্ধকার কাটে নি—কারণ প্রভাতের রৌদ্র তার মধ্যে এখনও অনেক জায়গাতেই ঢোকে নি—দেখে বোধ হয়, দুপুরেও ঢোকে কি না সন্দেহ । ইয়ার হোসেন দেখে শুনে বললে—এ যে ভীষণ জঙ্গল দেখছি— জামাতুল্ল বললে— আগে যেমন দেখেছিলাম তার চেয়েও যেন জঙ্গল বেশি হয়েছে। স্বশীল জানতে চাইলে এ দ্বীপে লোক আছে কি না। ইয়ার হোসেন বললে—ম্যাপে তো কিছু দেয় না—এ দ্বীপের কিছুই দেখিলে ম্যাপে—কী জামাতুল্লা, তুমি কী দেখেছিলে ? —কোথাও কিছু নেই। —বেশ ভাল জানো ? —আমার যাওয়ার পথে অন্তত তো কিছু দেখি নি— —এখান থেকে তোমার লে নগর কতদূর হবে আন্দাজ ? —তিন চার দিনের পথ । —এত কেন হবে ? এ দ্বীপের প্রস্থ তো খুব বেশি হবার কথা নয়! স্বশীল বললে—ক’ত বলে আন্দাজ করছেন, মিঃ হোসেন ? —জিশ মাইলের মধ্যে। তবে একটা কথা, এই জঙ্গল ঠেলে যাওয়ায় পথ এগোবে না বেশি। অনেক জায়গায় পথ কেটে করে নিয়ে তবে এগুতে হবে । তিন দিন লাগা বিচিত্র নয় । সেদিন তাবু খাটিয়ে পুরে বিশ্রাম করে বিকেলের দিকে দ্বীপের মধ্যে ঢোকৰার জন্তে ইয়ার হোলেন সবাইকে তৈরী হতে বললে। মালয় কুলি ওরা এনেছিল সাতজন, জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে ধাৰার জন্তে–এরা সবাই ইয়ার হোসেনের হাতের লোক এবং মুসলমান ধর্মাবলম্বী। ওদের গতিক বড় ক্ষৰিখের বলে মনে হয়নি মুশীলের ও সনৎএর গোড়া থেকেই। দেখে মনে হয় লিঙ্গাপুরে এরা চুরি ডাকাতি ও রাহাজানি করে চালিয়ে এসেছে এতদিন। যেমন