পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইৗরামানিক জ্বলে రిుల স্বশীল বললে—ওহে, নদীটা আমাদের দেশের বড় একটা খালের মত দেখছি। এ দ্বীপে এত বড় নদী আসছে কোথা থেকে ? তেমন বড় পাহাড় কোথাষ ? —নিশ্চয়ই বড় পাহাড় আছে বনের মধ্যে, সেইদিকেই তো যাচ্ছি—দেখা যাক— আরও আধঘণ্টা সকলে মিলে গভীর জনহীন বনের মধ্যে দিয়ে চলল। বনের রাজ্য বটে এটা—সত্যিকার বন কাকে বলে এতদিন পরে প্রত্যক্ষ করল স্বশীল সনৎ । হঠাৎ এক জায়গায় একটা নাগকেশর গাছ দেখে স্বশীল বলে উঠল—এই দ্বাখ একটা আশ্চৰ্য্য জিনিস। এই গাছ কোথাও এদিকে দেখা যায় না । নিশ্চয়ষ্ট ভারতবর্ষ থেকে আমদানি এ গাছটা । খুজতে খুজতে আশেপাশে আরও কয়েকটা নাগকেশর গাছ পাওয়া গেল। এই গভীর বনের মধ্যে নাগকেশর গাছ থাকার মানেই হচ্ছে এখানে কোন ভারতীয় উপনিবেশের অস্তিত্ব ছিল পুরাকালে। সনৎ বললে—কিন্তু এ গাছ তো খুব পুরোনো না, দেখেই মনে হচ্ছে। আট ন-শো বছরের নাগকেশর গাছ কি বঁাচে ? — তা নয় । ঔপনিবেশিক ভারতীয়দের নিজেদের হাতে পোতা গাছের চারা এগুলো । বড় গাছগুলোর থেকে বীজ পড়ে পড়ে এগুলো জন্মেছে। এ গাছ অধস্তন চতুর্থ বা পঞ্চম পুরুষ আসল গাছের । - সেদিনই সন্ধ্যার কিছু পূৰ্ব্বে সনৎ বনের মধ্যে এক জায়গায় একটা কৃষ্ণপ্রস্তর-মূৰ্ত্তি দেখে চিৎকার করে সবাইকে এসে খবর দিলে। ওরা ছুটতে ছুটতে গিয়ে দেখলে গভীর জঙ্গলের লতাপাতার মধ্যে একটা পাষাণ-মূৰ্ত্তি—মূৰ্ত্তির মুণ্ডু নেই, তবে হাত পা দেখে মনে হয় শিবমূৰ্ত্তি ছিল সেট। দু’হাত উচু প্রস্তর-বেদীর ওপর মুক্তিটা বসানো, এক হাতে বরাভয়, অন্ত হাতে ডমরু, গলায় অক্ষমালা—এত দূর দেশে এসে ভারতীয় সংস্কৃতির এই চিহ্ন দেখে স্বশীল ও সনৎ বিস্ময়ে ও আনন্সে অভিভূত হয়ে পড়ল—সেখান থেকে যেন সরে যেতে পারে না। এই স্তর সমূত্রে পাড়ি দিয়ে তাদের পূর্বপুরুষেরা হিন্দুধর্মের বাণী, বহন করে এনেছিলেন একদিন এদেশে। স্থলু সমুদ্রের ওই ডুবো পাহাড় অতিক্রম করতে চীনা জাঙ্ক ওয়ালা যে কৌশল দেখালে, এই কম্পাস ও ব্যারোমিটারের যুগের বহু বহু পূৰ্ব্বে তাদের পূর্বপুরুষেরা সে কৌশল একদিন না যদি দেখাতে পারতেন—তবে নিশ্চয়ই এ দ্বীপে পদাপর্ণ তাদের পক্ষে সম্ভব হত না। মনে মনে স্বশীল তাদের প্রণতি জানালে। নমো নমঃ দিগ্বিজয়ী পূৰ্ব্বপুরুষগণ, আশীৰ্ব্বাদ কর—ষে বল ও তেজ তোমাদের বাহুতে, ষে দুৰ্দ্ধৰ্ষ অনমনীয়তা ছিল তোমাদের মনে, আজ তোমার অধঃপতিত দুৰ্ব্বল উত্তরপুরুষেরা যেন সেই বল ও তেজের আদর্শে আবার নিজেদের গড়ে তুলতে পারে, সার্থক করতে পারে ভারতের নাম বিশ্বের দরবারে! জামাতুল্লা ও ইয়ার হোসেনও চমৎকৃত হল। এ বনেও একদিন মাহুষ ছিল তাহলে ! এই ষে গষ্ঠীর বন আজ গুৰু অজগর আর ওরাং-ওটাংয়ের বিচরণক্ষেত্র, এখানে একদিন সভ্য মানুষের পদশৰ ধ্বনিত হয়েছে, মন্দির গড়েছে, মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করেছে—এ-ই সকলের চেয়ে