৩২৬ বিভূতি-রচনাবলী হওয়া চলবে না। ঠিক সেই সময় ওদের নিকট থেকে হাত পাঁচ ছয় দূরে ইয়ার হোসেনের একজন অনুচর—ষে শিকল টেনে তুলেছিল জল থেকে—সে নামল, উদ্দেশু, ওদের পাশাপাশি সেও পরিখা পার হবে। কিন্তু পরক্ষণেই এক ভয়াবহু কাও ঘটল । স্বশীল চোখের কোণ দিয়ে অল্পক্ষণের জন্তে দেখতে পেলে, লোকটার ছ-লাত হাত দূরে ছোট কাঠের মত কালো কি একটা জিনিস যেন ভাসছে। দু-সেকেও মাত্র, পরেই হঠাৎ যেন ভূমিকম্পে বিরাট জলোচ্ছ্বাস উঠল, একটা আৰ্ত্ত চিৎকার-ধ্বনি অল্পক্ষণের মধ্যে শোনা গেল•••কিসের একটা প্রবল ঝাপট এসে ওদের জলের ওপর কাত করে ফেললে -- ওদের দু-জনকে। পরক্ষণেই ইয়ার হোসেনের সেই অন্তচর অদৃপ্ত। g কী হল ব্যাপারটা কেউ বুঝতে পারলে না—অবিপ্তি এক মিনিটও হয় নি—এর মধ্যে সব ঘটে গেল । সঙ্গে সঙ্গে ডাঙায় যারা ছিল তারা চেচিয়ে উঠল—শয়তান ! শয়তান ! ইয়ার হোসেন আকুলভাবে চিৎকার করে বললে—ডাঙায় ওঠো—ডাঙায় ওঠে ! হতভম্ব স্বশীল কাদা হঁচড়ে মরি-বাচি ডাঙায় উঠল—পাশাপাশি ইয়ার হোসেন উঠল, জলে চেয়ে দেখলে জল কাদা-ঘোলা হয়েছে, ইয়ার হোসেনের অক্ষচর নিশ্চিহ্ন। স্বশীল ও ইয়ার হোসেন তখনও হাপাচ্ছে ; স্বশীলের বুকের মধ্যে যেন হাতুড়ি পিটছে । সে ভীত কণ্ঠে বললে—কী হল ? ইয়ার হোসেন বললে—আমাদের সাবধানে জলে নামা উচিত ছিল। এইসব প্রাচীন কালের জলাশয়ে কুমির থাকা সম্ভব, একথা ভুলে গিয়েছিলাম। খোজ সবাই— কুমির ! স্বশীল অবাক হয়ে গেল। কে জানত নগরীর পরিখায় কুমির থাকতে পারে ? দুর্গপরিখার প্রহরী এরা—হয়ত প্রাচীন দিনেই শক্ররোধকল্পে জলের মধ্যে কুমির ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, স্ববিশ্বস্তু প্রহরীর স্থায় এখনও তার বাইরের লোকের অনধিকার প্রবেশে বাধাদান করছে। খুজে কিছু হল না—জল কিছুক্ষণ পরে হতভাগ্য অমুচরের রক্তে রাঙা হয়ে উঠল। ইয়ার হোসেন বললে—আজ থামলে আমাদের চলবে না—এগোও । নগরের ফটক খোজে স্বশীল বললে—জলের মধ্যে অজানা বিপদ। জল পার হওয়ার দরকার নেই—হেঁটে বা সাতন্ত্রে। কোথাও সেতু আছে কি না দেখা যাক । আবার উত্তর মুখে সকলে চলল। মাইল দুই সোজা চলতে সদ্ধা হয়ে গেল—কারণ ভীষণ জঙ্গল কেটে কেটে অগ্রসর হতে হচ্ছে। আগুন জেলে ডাৰু ফেলে সেদিন সকলে সেখানে রাজি কাটাবার আয়োজন করলে। এমন সময় বহু দূরে একটা বন্দুকের আওয়াজ শোনা গেল—তার উত্তরে ওরাও একটা আওয়াজ করলে। দুটি দলের মধ্যে যোগসূত্র রাখবার এক
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৩৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।