পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GSb- বিভূতি-রচনাবলী সুশীল বললে—তা কখনো করবেন না মিঃ হোসেন, যেখানকার দেবতা সেইখানেই তাকে শাস্তিতে থাকতে দিন। অমঙ্গলকে ডেকে আনবেন না। সিংহদ্বার অতিক্রম করে ওরা নগরীর মধ্যে ঢুকল। কিন্তু অল্প কিছুদূর গিয়েই দেখলে, এত দুর্ভেদ্য জঙ্গল যে দশ হাত এগিয়ে যাবার উপায় নেই বন না কাটলে । সিংহদ্বারের সামনেই নিশ্চয় প্রাচীন নগরের রাজপথ ছিল, কিন্তু বর্তমানে সে রাজপথের ওপরেই তিন চারশো বছরের পুরোনো বট-জাতীয় বৃক্ষ, বস্ত রবার, বন্ত ডুমুর গাছ। এইসব বড় গাছের নিচে আগাছা ও কাটালতার জঙ্গল । ওরাং-ওটাংও এই জঙ্গল ভেদ করে অগ্রসর হতে পারে না – মাহুৰ কোন ছাঁর । ইয়ার হোসেনের হুকুমে মালয় অনুচরেরা "বোলো দিয়ে জঙ্গল,কেটে কোন রকমে একটু মুড়িপথ বার করতে করতে সোজা চলল । স্বশীল বললে—এ জঙ্গল তো দেখছি নগরের বাইরে যেমন ছিল এখানেও তেমনি। কেবল এটা পাচিলের মধ্যে এই যা তফাত । কে একজন চেচিয়ে উঠল—দেখুন ! দেখুন ! সকলে সবিস্ময়ে চেয়ে দেখল, সামনে প্রকাও একটা মন্দিরের চুড়া লতা ঝোপের আবরণ থেকে অনেক উচুতে মাথা বের করে দাড়িয়ে আছে। মন্দিরের কাছে যাবার কোন উপায় নেই—অনেক দূর থেকে বড় বড় দেওয়ালভাঙা পাথর ছড়িয়ে জঙ্গলাবৃত হয়ে পড়ে আছে অন্তত দেড়শো হাত পৰ্য্যন্ত । ওরা ডিঙিয়ে লাফিয়ে কোন রকমে মন্দিরের সামনে বড় চত্বরের কাছে এল—কিন্তু সামনেই গোপুরমের মত উচু পাইলন টাওয়ার। তার স্ববিশাল পাথরের খিলান ফেটে চোঁচির হয়ে সিংহদ্বারের মতই আষ্টেপৃষ্ঠে বড় বড় শেকড় আর লতার বাধনে আজ কত যুগ যুগ ধরে ঝুলছে —তার ঠিকানা কারো কাছে নেই। গোপুরম ছাড়িয়ে মন্দিরের দেওয়াল, বিকটাকার দৈত্যের মুখের মত সারি সারি অনেকগুলো মুখ দেওয়ালের গায়ে বেরিয়ে আছে—সুশীল আণ্ডল দিয়ে ওদের দেখিয়ে বললে—দেখ কৗ চমৎকার কাজ । হয় পাথরের কড়ি নয়ত পয়েনালি, যাকে ইংরাজিতে বলে গর্গয়েল। অর্থাৎ বিকট জানোয়ারের মুখ বসানো নালি । সকলেই অবাক হয়ে সেই কল্পনাস্থষ্ট ভীষণ মুখগুলোর দিকে চেয়ে রইল। সুন্দরকে গড়ে তোলে সেও যেমন কৌশলী শিল্পী, ভীষণকে যে রূপ দেয়, সে শিল্পীও ঠিক তত বড়। সুশীলের মনে পড়ল আনাতোল ফ্রাসের সেই গল্প, শয়তানকে এমন বিকট করে আঁকলে শিল্পী যে, রাতের অন্ধকারে শয়তান এসে শিল্পীকে জাগিয়ে জিগ্যেস করলে—তুমি আমাকে এর আগে কোথায় দেখেছিলে যে অমন করে একেছ ? শিল্পী বললে—আপনি কে ? শয়তান বললে—আমি লুসিফার। যাকে তোমরা বল শয়তান। ও নামটায় আমার ভয়ানক আপত্তি তা জানো ? তুমি কী বিশ্রী করে একেছ জামায় । আমি কি অত খারাপ দেখতে দেখ না আমার দিকে চেয়ে ! শিল্পী দেখলে শয়তানের মূৰ্ত্তি দেখতে বেশ স্বন্দর, তবে মুখশ্ৰী ঈষৎ বিষন্ন। ভয়ে ঠক্ ঠক্‌