হীরামানিক জ্বলে CoS জামাতুল্লা বললে—তা কখনো করতে যাবেন না, ৰিপদে পড়বেন। কী আছে গর্তের মধ্যে কে জানে ! স্বশীল বললে—নেমে দেখতেই হবে । আমি এখানে থাকি, তোমরা গিয়ে তাবু থেকে মোটা দড়ি হাত-চল্লিশ, টর্চ আর রিভলবার নিয়ে এল। ইয়ার হোসেনকে কিছু বোলো না । সব আনা হল। স্বশীল জামাতুল্লা দুজনে স্বভূঙ্গের মধ্যে নামল। খানিক দূর নামলে ওর। পাথরে বাধানে সিড়ি, পনেরো বোল ধাপ নেমেই কিন্তু দুজনে হতাশ হল দেখে, সামনে আর রাস্তা নেই। সিড়ি গিয়ে শেষ হয়েছে একটা গাথা দেওয়ালের সামনে । স্বশীল বললে—এর মানে কী জামাতুল্লা সাহেব ? —বুঝলাম না বাবুজি । যদি যেতেই দেবে না, তবে সিড়ি গেথেছে কেন ? রাত হয়ে আসছে । ওরা দুজনে টর্চ ফেলে চারিদিক ভাল করে দেখতে লাগল। হঠাৎ স্বশীল চেচিয়ে উঠে বললে—দেখ, দেখ ! দুজনেই অবাক হয়ে দেখলে মাথার ওপরে পাথরের গায়ে ওদের পরিচিত সেই চিহ্ন ক্ষোদা—পদ্মরাগ মণির ওপর যে-চিহ্ন ক্ষোদা ছিল । ভারতীয় স্বস্তিক চিহ্ন, প্রত্যেক বাহুর কোণে এক এক জানোয়ারের মূৰ্ত্তি—সর্প, বাজপাখি, বাঘ ও কুমির। –এই সেই অঁাক-জোক বাবুজি । কিন্তু এর মানে কী, সিড়ি বন্ধ করলে কেন, বুঝলেন কিছু ? দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেল। স্বশীল সামনে পাথরখানাতে হাত দিলে, বেশ মন্থণ ; মাপ নিয়ে চৌরশ করে কেটে কে তৈরি করে রেখেছে । কিছুই বোঝা গেল না—অবশেষে হতাশ হয়ে ওরা গৰ্ত্ত থেকে উঠে পড়ে তাবুতে ফিরে এল সনৎকে নিয়ে । সেখানে কাউকে কিছু বললে না। পরদিন দুপুরবেলা স্বশীল এক জায়গাটায় গেল। আবার স্বভূঙ্গের মধ্যে নামল । ওর মনে একথা বিশেষভাবে জেগে ছিল, লোকে এইটুকু গর্তে ঢোকবার জন্যে এরকম সিড়ি গাথে না । এ স্বভৃঙ্গ নিশ্চয় আরও অনেক বড়। কিন্তু তবে দশ ধাপ নেমেই পাথর দিয়ে এমন শক্ত করে বোজানো কেন ? এ গোলমেলে ব্যাপারের কোন মীমাংসা করা যাবে না দেখা যাচ্ছে। সুশীল চারিদিকে চেয়ে দেখলে মাথার ওপরে পাথরের গায়ে সেই অদ্ভূত চিহ্নটি স্বম্পষ্ট ক্ষোদাই করা আছে। এ চিহ্নই বা এখানে কেন ? তাল করে চেয়ে চিহ্নটি দেখতে দেখতে ওর চোখে পড়ল, ষে পাথরের গায়ে চিহ্নটি ক্ষোদাই করা তার এক কোণের দিকে আর একটা কি ক্ষোদাই করা আছে। স্বভূঙ্গের মধ্যে অন্ধকার খুব না হলেও আলোও তেমন নয়। স্বশীল টর্চ ফেলে ভাল করে দেখলে—চিহ্নটি আর কিছুই নয়, ঠিক যেন একটি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ রাখবার সামান্ত খোল । খোলের চারিপাশে দুটি লতার আকারের বলয় কিংবা অন্ত কোন অলঙ্কার পরম্পরযুক্ত। সুশীল কি মনে ভেবে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের খোলে নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চেপে দেখতে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সামনের পাথর ধেন কলের দোরের মত সরে একটা মানুষ যাবার মত ফাক হয়ে গেল। স্বশীল অবাক ! এ যেন সেই আরব্য উপস্কালের বর্ণিত আলিবাবার গুহা । বি, র, s—২১ *
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।