পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९२ বিভূতি-রচনাবলী নাম জিম্ কার্টার, আমারই মত, ভবঘুরে, তবে তার বয়স আমার চেয়ে বেশী। জিম্ একদিন আমার বন্দুকটা নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে হঠাৎ কি দেখে আশ্চৰ্য্য হয়ে গেল। আমায় বললে —বন্দুকের মাছি তোমার এ রকম কেন ? তারপর আমার গল্প, শুনে সে উত্তেজিত হয়ে উঠল। বললে—তুমি বুঝতে পারে নি এ জিনিসটা খাটি রূপে, খনিজ রূপো ! এ যেখানে পাওয়া যায়, সাধারণতঃ সেখানে রূপোর খনি থাকে। আমার আন্দাজ হচ্ছে এক টন পাথর থেকে সেখানে অন্ততঃ ন’হাজার আউন্স রূপে পাওয়া যাবে। সে জায়গাতে এক্ষুনি চলে। আমরা যাই । এবার আমরা লক্ষপতি হয়ে যাবে। সংক্ষেপে বলি। তারপর কার্টারকে সঙ্গে নিয়ে আমি যে পথে এসেছিলাম, সেই পথে আবার গেলাম। কিন্তু চার মাস ধরে কত চেষ্টা, কত অসহ কষ্ট পেয়ে, কতবার বিরাট দিকদিশাহীন মরুভূমিবং ভেল্ডের মধ্যে পথ হারিয়ে, মৃত্যুর দ্বার পর্য্যস্ত পৌঁছেও, কিছুতেই আমি সে স্থান নির্ণয় করতে পারলাম না। যখন সেখান থেকে সেবার তাবু উঠিয়ে দিয়েছিলাম, অত লক্ষ্য করি নি জায়গাটা । আফ্রিকার ভেল্ডে কোনো চিহ্ন বড় একটা থাকে না, যার সাহায্যে পুরোনে জায়গা খুজে বার করা যায়—সবই যেন একরকম। অনেকবার হয়রান হয়ে শেষে আমরা রূপোর খনির আশা ত্যাগ করে গুয়াই নদীর দিকে চললাম। জিম্ কার্টার আমাকে আর ছাড়লে না, তার মৃত্যু পর্য্যস্ত আমার সঙ্গেই ছিল। তার সে শোচনীয় মৃত্যুর কথা ভাবলে এখনও আমার কষ্ট হয় । তৃষ্ণার কষ্টই এই ভ্রমণের সময় সব কষ্টের চেয়ে বেশী বলে মনে হয়েছে আমাদের কাছে। তাই এখন থেকে আমরা নদীপথ ধরে চলবো, এই স্থির করা গেল। বনের জন্তু শিকার করে থাই, আর মাঝে মাঝে কাফির বস্তি যদি পাই, সেখান থেকে মিষ্টি আলু, মুরগী প্রভৃতি সংগ্ৰহ করি। একবার অরেঞ্চ নদী পার হয়ে প্রায় পঞ্চাশ মাইল দূরবর্তী একটা কাফির বস্তীতে আশ্রয় নিয়েছি, সেই দিন দুপুরের পরে কাফির বস্তীর মোড়লের মেয়ে হঠাৎ ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমরা দেখতে গেলাম—পাচ-ছ বছরের একটা ছোট উলঙ্গ মেয়ে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিচ্ছে—তার পেটে নাকি ভয়ানক ব্যথা । সবাই কঁাদছে ও দাপাদাপি করছে। মেয়েটার ঘাড়ে নিশ্চয়ই দানো চেপেছে—ওকে মেরে না ফেলে ছাড়বে না। তাকে ও তার বাপ-মাকে জিজ্ঞাসা করে এইটুকু জানা গেল, সে বনের ধারে গিয়েছিল—তারপর থেকে তাকে ভূতে পেয়েছে। আমি ওর অবস্থা দেখে বুঝলাম কোনো বনের ফল বেশী পরিমাণে খেয়ে ওর পেট কামড়াচ্ছে । তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কোনো বনের ফল সে খেয়েছিল কিনা ? সে বললে –হঁ্যা, খেয়েছিল। কাচা ফল ? মেয়েটা বললে—ফল নয়, ফলের বীজ। সে ফলের বীজই খাদ্য। এক ডোজ হোমিওপ্যাথিক ওষুধে তার ভূত ছেড়ে গেল। আমাদের সঙ্গে ওষুধের বাক্স ছিল। গ্রামে আমাদের খাতির হয়ে গেল খুব। পনেরো দিন আমরা সে গ্রামের সর্দারের অতিথি হয়ে রইলাম। ষ্টলাণ্ড হরিণ শিকার করি আর রাত্রে কাফিরদের মাংস খেতে নিমন্ত্রণ