চাদের পাহাড় ২৩ করি। বিদায় নেবার সময় কাফির সর্দার বললে-তোমরা সাদা পাথর খুব ভালবাস—না ? বেশ খেলবার জিনিস। নেবে সাদা পাথর ? দাড়াও দেখাচ্ছি। একটু পরে সে একটা ডুমুর ফলের মত বড় সাদা পুথির আমাদের হাতে এনে দিলে। জিম্ ও আমি বিস্ময়ে চমকে উঠলাম-জিনিসটা হীরক !..খনি বা খনির ওপরকার উপলাকীর্ণ মৃত্তিকাস্তর থেকে প্রাপ্ত পালিশ-না-করা হীরক থও ! কাফির সর্দার বললে এটা তোমরা নিয়ে যায়। ঐ যে দূরের বড় পাহাড় দেখছে, ধোয়া-ধোয়া—এখান থেকে হেঁটে গেলে একটা চাদের মধ্যে ওখানে পৌছে যাবে। ঐ পাহাড়ের মধ্যে, এ রকম সাদা পাথর অনেক আছে বলে শুনেছি। আমরা কখনো যাই নি, জায়গা ভাল নয়, ওখানে বুনিপ বলে উপদেবতা থাকে। অনেক চাদ আগেকার কথা, আমাদের গ্রামের তিনজন সাহসী লোক কারো বারণ না শুনে ঐ পাহাড়ে গিয়েছিল, আর ফেরে নি। আর একবার একজন তোমাদের মত সাদা মানুষ এসেছিল, সেও অনেক, অনেক চাদ অাগে। আমরা দেখি নি, আমাদের বাপ-ঠাকুরদাদাদের আমলের কথা। সে গিয়ে আর ফেরে নি । g কাফির গ্রাম থেকে বার হয়েই পথে আমরা ম্যাপ মিলিয়ে দেখলাম—দূরের ধোয়া-ধোয়৷ অস্পষ্ট ব্যাপারটা হচ্ছে রিখটারস্ভেল্ড পৰ্ব্বতশ্রেণী—দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বাপেক্ষ বন্য, অজ্ঞাত, বিশাল ও বিপদসঙ্কুল অঞ্চল। কোন সভ্য মানুষ সে অঞ্চলে পদার্পণ করে নি—দু-একজন দুৰ্দ্ধৰ্ষ দেশ-আবিষ্কারক বা ভৌগোলিক বিশেষজ্ঞ ছাড়া। ঐ বিস্তীর্ণ বনপৰ্ব্বতের অধিকাংশ স্থানই সম্পূর্ণ অজানা, তার ম্যাপ নেই, তার কোথায় কি আছে কেউ বলতে পারে না। জিম্ কার্টার ও আমার রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠল—আমরা দুজনেই তখনি স্থির করলাম ওই অরণ্য ও পর্বতমালা আমাদেরই আগমন প্রতীক্ষায় তার বিপুল রত্নভাণ্ডার লোকচক্ষুর আড়ালে গোপন করে রেখেছে। আমরা ওখানে যাবোই। কাফির গ্রাম থেকে রওনা হবার প্রায় সতেরো দিন পরে আমরা পৰ্ব্বতশ্রেণীর পাদদেশের নিবিড় বনে প্রবেশ করলাম। পূর্বেই বলেছি দক্ষিণ আফ্রিকার অত্যন্ত দুৰ্গম প্রদেশে এই পৰ্ব্বতশ্রেণী অবস্থিত। জঙ্গলের কাছাকাছি কোনো কাফির বস্তি পর্য্যস্ত আমাদের চোখে পড়ল না । জঙ্গল দেখে মনে হল কাঠুরিয়ার কুঠার আজ পর্য্যস্ত এখানে প্রবেশ করে নি। সন্ধ্যার কিছু পূৰ্ব্বে আমরা জঙ্গলের ধারে এসে পৌঁছেছিলাম। জিম্ কাটারের পরামর্শ মত সেখানেই আমরা রাত্রের বিশ্রামের জন্য তাবু খাটালাম। জিম জঙ্গলের কাঠ কুড়িয়ে আগুন জাললে—আমি লাগলুম রান্নার কাজে। সকালের দিকে একজোড়া পাখী মেরেছিলাম, সেই পার্থী ছাড়িয়ে তার রোস্ট, করবো এই ছিল মতলব। পার্থী ছাড়ানোর কাজে একটু ব্যস্ত আছি—এমন সময় জিম্ বললে—পার্থী রাখে। দু পেয়াল কাফি করে তো আগে। আগুন জালাই ছিল। জল গরম করতে দিয়ে আবার পার্থী ছাড়াতে বসেছি, এমন সময় সিংহের গর্জন একেবারে অতি নিকটে শোনা গেল। জিম্ বন্দুক নিয়ে বেরুল, আমি
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।