পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

θ4 ο বিভূতি-রচনাবলী সব জল ওপরের ঘর থেকে নিচের ঘরে চলে স্বায় । স্বশীল বললে—স্টীম পাম্প আনলেও তার জল শুকোনো যাবে না, কারণ—তাহলে গোটা ভারত মহাসাগরকেই স্টীম পাম্প দিয়ে তুলে ফেলতে হয়—ওর পেছনে রয়েছে গোটা ভারত সমুদ্র। সে জামাতুল্লার দিকে চেয়ে বিষাদের স্বরে বললে—এই হল তোমার আসল বিন্ধমুনি —সমূদ্র, বুঝলে জামাতুল্লা ? ওরা সেই বনের গভীরতম প্রদেশের একটা পুরোনো মন্দির দেখলে। মন্দিরের মধ্যে এক বিরাট দেবমূৰ্ত্তি, স্বশীলের মনে হল, সম্ভবত বিষ্ণুমূৰ্ত্তি । যুগযুগান্ত কেটে গেছে, মাথার ওপরকার আকাশে শত অরণ্যময়ূরীদের নৰ্ত্তন শেষ হয়ে আবার শুরু হয়েছে, রক্তাশোকতরুর তলে কত মুখস্বযুপ্ত হংসমিথুনের নিদ্রাভঙ্গ হয়েছে— সাম্রাজ্যের গৌরবের দিনে ঘৃতপক অমৃতচরুর চারু গন্ধে মন্দিরের অভ্যস্তর কতদিন হয়েছে আমোদিত—কত উত্থান, কত পতনের মধ্যে দেবতা অবিচল দৃষ্টিতে বহুদূর অনন্তের দিকে চেয়ে আছেন, মুখে মুকুমার সব্যঙ্গ মৃদ্ধ চাপা হাসি—নিরুপাধি চেতনা যেন পাষাণে লীন, আত্মস্থ। স্বশীল সসন্ত্রমে প্রণাম করল—দেবতা, সনৎ ছেলেমাহুষ –ওকে তোমার পায়ে রেখে গেলুম —ক্ষমা কর তুমি ওকে । 蠱 譬 專 স্বশীল কলকাতায় ফিরেছে। কারণ যা ঘটে গেল, তার পরের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত। ইয়ার হোসেন সন্দেহ করে নি। সনৎ একটা কুপের মধ্যে পড়ে মরে গিয়েছে শুনে ইয়ার হোসেন খুজে দেখবার আগ্রহও প্রকাশ করে নি। চীনা মাঝি জাঙ্ক, নিয়ে এসেছিল—তারই জাঙ্কে সবাই ফিরল সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুর থেকে অস্ট্রেলিয়ান মেলবোট ধরে কলম্বো। কলম্বোর এক জহুরীর দোকানে জামাতুল্লা সেই হওঁ,কির মত জিনিস দেখাতেই বললে— এ খুব দামী জিনিস, ফসিল অ্যাম্বার—বহুকালের অ্যাম্বার কোন জায়গায় চাপা পড়ে ছিল। ছু-খানা পাথর দেখে বললে—আনকাটু এমারেল্ড, খুব ভাল ওয়াটারের জিনিস হবে কাটলে। আল্লামালাইয়ের জহুরীরা এমারেল্ড কাটে, সেখানে গিয়ে কাটিয়ে নেবেন। দামে বিকোবে। সৰস্বদ্ধ পাওয়া গেল প্রায় সত্তর হাজার টাকা । ইয়ার হোসেনকে ফাকি না দিয়ে ওরা তাকে তার স্বাধ্য প্রাপ্য দশ হাজার টাকা পাঠালে—সেই মাত্রাঙ্গী বিধবাকে পাঠালে বিশ হাজার-বাকি টাকা তিন তাগ হল জামাতুল্লা, সনতের মা ও স্বশীলের মধ্যে। টাকার দিক থেকে এমন কিছু নয়, অভিজ্ঞতার দিক থেকে অনেকখানি। কত রাত্রি গ্রামের বাড়ীতে নিশ্চিন্ত আরাম-শয়নে গুয়ে ওর মনে জাগে মহাসমুদ্ৰ-পারের সেই প্রাচীন হিন্দুরাজ্যের অরণ্যাবৃত ধ্বংসস্তুপ-“সেই প্রশান্ত ও রহস্যময় বিষ্ণুমূৰ্ত্তি-হতভাগ্য সনতের শোচনীয় পরিণাম-অরণ্যমধ্যবর্তী তাঁবুতে সে রাত্রির সেই অদ্ভূত স্বপ্ন। জীবনের গভীর বহুঙ্কের কথা ভেবে তখন সে অবাক হয়ে যায়। জামাতুল্লা নিজের ভাগের টাকা নিয়ে কোথায় চলেগেল, তার সঙ্গে আর স্বশীলের দেখা হয়নি।