७¢९ বিভূতি-রচনাবলী ধৈর্ধ্য আমার ছিল না। স্বতরাং দলের সঙ্গে আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। নদীর দিকে বন বেজায় ঘন। এদিকে বড় একটা কেউ আসে না। খল খল শৰে শুকনো পাতার ওপর দিয়ে শেয়াল চলে যাচ্চে। কুরো পাখি ডাচে উচু তেঁতুল গাছের মাথায়। আমার যেন কেমন ভয় ভয় করচে। আমাদের স্কুলের ছেলেরা কানে হাত দিয়ে গায়— ঠিক দুক্খুর বেলা— ভূতে মারে ঢালা— ভূতের নাম রসি ইটু গেড়ে বসি— 魯 সঙ্গে সঙ্গে তারা অমনি হাটু গেড়ে বসে পড়ে। এসব করলে নাকি ভূতের ভয় চলে शांग्न । আমার সঙ্গে কেউ নেই—ঠিক দুপুর বেলাও বটে ! মন্তরটা মুখে আউড়ে হাটু গেড়ে বলবো । কিন্তু ভূতের নাম রসি হোল কেন, খামও হোতে পারতে, কালো হোতে পারতো, নিবারণ হোতেই বা আপত্তি কি ছিল ? একটা বাক ঘুরে বড় একটা বঁাশবন আর নিবিড় ঝোপ তার তলায়। সেখানটায় গিয়ে আমার বুকের চিপ ঢিপ শব্দ যেন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল । একটা আমড়া গাছের তলায় ঘন ঝোপের মধ্যে আমড়া গাছের গুড়ি ঠেস দিয়ে বসে আছে বরো বাগদিনী । ভালো করে উকি মেরে দেখলাম। হ্যা, ঠিক—বরো বাগদিনীই বটে, সৰ্ব্বনাশ ! সে যে মরে গিয়েছে ! বরো বাগদিনীর বাড়ী আমাদের গায়ের গোসাই পাড়ায়। অশথতলার মাঠে একখানা দোচালা কুঁড়ে ঘরে সে থাকতে, কেউ ছিল না তার। পাল মশায়ের বাড়ী বি-গিরি করতে অনেক দিন থেকে। তারপর তার জর হয়, এই পৰ্য্যস্ত জানি। একদিন তাকে আর দেখা বায় না। মাস জুই আগের কথা। একটা স্ত্রীলোকের মৃতদেহ পাওয়া গেল বাওড়ের ধারে বঁাশবনে --শেয়াল কুকুরে তাকে খেয়ে ফেলেছে অনেকটা। সেই রকমই কালো রোগ-মত দেহটা, বরো বাগজিনীর মতো। সকলে বঙ্গে, জরের ঘোরে বাওড়ে জল তুলতে গিয়ে বরো গিয়েচে । সেই বরো বাগদিনী আমড়া গাছের গুড়ি ঠেস দিয়ে দিব্যি বসে ! আমি এক ছুটে বনবাগান ভেঙে দিলাম ছুট পাকা রাস্তার দিকে। যখন বাদামতলায় দলের মধ্যে এসে পৌঁছলাম তখন আমার গাঠক্ ঠক্ করে কাপছে। ছেলেরা বয়ে—কি হয়েছে রে ? আমন কচ্ছিল কেন ? আমি বল্লাম-ভূত। —কোথায় রে ; লে কি ? দূর—
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৬৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।