পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vøứ8 বিভূতি-রচনাবলী —সৰ্ব্ব পরামানিক কে ? —আরে, ওই শ্রীশ পরামানিকের বাবার নাম। ওদেরই বাগান। আবার বর্ণনা করি সবিস্তারে । রাখাল মাস্টার গোড়া ব্রাহ্মণ,—হাচি, টিকটিকি, জল-পড়া, তেল-পড়া সব বিশ্বাস করতেন। গভীরভাবে ঘাড় নেড়ে বলেন—তা হবে না । অপঘাত মৃত্যু—গতি হয় নি— হাড়ি-বেচা-মাস্টার একটু নাস্তিক প্রকৃতির লোক। অবিশ্বাসের স্বর তখনও তার কথার মধ্যে থেকে দূর হয় নি। তিনি বল্পেন–কিন্তু দাদা, এই দুপুর বেলা, ভূত থাকবে বাগানে বসে গাছের গুড়ি ঠেস দিয়ে ] —তাতে কি ? তা থাকবে না ভূত এমন কিছু লেখাপড়া করে দিয়েচে নাকি ? তোমাদের আবার যত সব ইয়ে— —আচ্ছা চলুন গিয়ে দেখে আসি । ছেলেরা সবাই সমস্বরে চীৎকার করে সমর্থন করলে। রাখাল মাস্টার বলেন,—হঁ্য, যত সব ইয়ে—ভূত তোমাদের জন্যে সেখানে এখনো বসে আছে কি না ? ওরা হোল কি বলে অশরীরী—মানে ওদের শরীর নেই—ওর মানে বিশেষ অবস্থায়— হাড়ি-বেচা-মাস্টার বল্পেন—চলুন না দেখে আসি গিয়ে কি রকম কাগুটী, ধেতে দোষ কি f আমরা সকলেই তো এই চাই। এরা গেলে এখুনি ইস্কুলের ছুটি হবে এখন । সেদিকেই আমাদের ঝোকটা বেশি। যাওয়া হোল সবাই মিলে। হড়মুড় করে ছেলের পাল চললে মাস্টারদের সঙ্গে । আমি আগে আগে, ওরা আমাদের পেছনে । সেই নিবিড় ঝোপটাতে আমি নিয়ে গেলাম ওদের সকলকে। ষে-দৃগু চোখে পড়লে, তা কখনো ভুলবো না—এত বৎসর পরেও সে দৃগু আবার যেন চোখের সামনে দেখতে পাই এখনো ! সবাই মিলে ঝোপ-ঝাপ ভেঙে সেই আমড়াতলায় গিয়ে পৌঁছলাম। যা দেখলাম, তা অবিকল এই ৷ আমড়াগাছের তলায় একটা ছেড়া, অতি-মলিন, অতি-স্বৰ্গন্ধ কাথা পাতা, পাশে একটা ভাড়ে আধ ভাড়টাক জল। একরাশ আমড়ার খোসা ও আঁটি জড় হয়েচে পাশে-কতক টাটক, কতক কিছু দিন আগে খাওয়া, একরাশ কাচা তেঁতুলের ছিবড়ে, পাকা চালতার ছিবড়ে—শুকনো। ছিন্ন কাথার ওপর জীর্ণ শীর্ণ বৃদ্ধ বরো বাগদিনী মরে পড়ে আছে। খানিকট আগে মারা গিয়েচে । *